যেন ভুলে না যাই

বীরশ্রেষ্ঠ  শহীদ  মতিউর  রহমান

১৯৪১  ~  ১৯৭১

২০শে  আগস্ট  ,বীরশ্রেষ্ঠ  শহীদ  মতিউর  রহমানের  শাহাদাৎ  দিবস।  ১৯৭১  সালের এই দিনে  তিনি  শহীদ  হউন।
'যখন  মতিউর  করাচির  খাঁচা  ছিঁড়ে  ছুটে  গেল  মহাশূন্যে  T-৩৩  বিমানের দুর্দম পাখায় তার স্বপ্নের  স্বাধীন  স্বদেশ  মনে  করে  ফেলে  তার  মাহিন,  তুহিন,  মিলি  সর্বস্ব  সম্পদ৷'

তিনি  উড়েছিলেন  আকাশে,  কোটি  মানুষের  মতো  তাঁর  চোখেও  ছিল  স্বপ্নের  স্বাধীন  দেশ  স্থাপনের  প্রত্যাশা৷  কিন্তু  তিনি  তা  দেখে  যেতে  পারেননি৷  তাঁর  ছোট্ট  বিমান  ব্লু  বার্ড  ভূপতিত  হলেও  প্রতিষ্ঠিত  হয়েছে  তাঁর  স্বপ্ন৷  আর  মৃত্যুর  পূর্বে  বাঙালিদের  স্বাধীনতা  লাভের  স্পৃহার  সর্বোচ্চ  পরিমাণটি  দেখিয়ে;  কাঁপন  ধরিয়ে  দিয়ে  গিয়েছেন  পাকিস্তানিদের  মনে৷  আজ  স্বাধীন  এদেশের  মানুষ  তাই  তাঁকে  ধারণ  করে  হৃদয়ের  উচ্চাসনে,  স্মরণ  করে  শ্রদ্ধায়৷

তিনি  যুদ্ধের  প্রস্তুতি  নিতে  গিয়ে  শহীদ  হওয়া  এবং  যুদ্ধে  সর্বোচ্চ  বীরশ্রেষ্ঠ  খেতাব  পাওয়া,  ফ্লাইট  লেফটেন্যান্ট  মতিউর  রহমান৷  ১৯৭১  সালের  মুক্তিযুদ্ধ  আর  দীর্ঘ  নয়  মাসে  তিরিশ  লক্ষ  বাঙালির  প্রাণের  বিনিময়ে  অর্জিত  স্বাধীনতা,  বাঙালি  হিসেবে  আমাদের  সর্বশ্রেষ্ঠ  অর্জন৷  এ  অর্জনকে  আমরা  ধারণ  করি  সর্বোচ্চ  সম্মানে৷  যাঁরা  এ  অর্জনের  পথ  সুগম  করার  জন্য  জীবন  বাজি  রেখেছেন,  যাঁরা  প্রাণ  দিয়েছেন,  তাঁরা  জাতির  শ্রেষ্ঠ  সন্তান৷  মতিউর  রহমান  এঁদেরই  একজন৷

১৯৩৯  সাল৷  সারা  পৃথিবী  জুড়ে  দ্বিতীয়  বিশ্বযুদ্ধের  ডামাডোল৷  ইংরেজদের  অধীনে  এই  ভারত  উপমহাদেশের  ঢাকা  নামের  ভূখন্ডের  মানুষগুলোও  তখন  যুদ্ধের  আতঙ্কে  আতঙ্কিত৷  এমনি  যুদ্ধের  মাঝে  ১৯৪১  সালে  ঢাকা  শহরের  আগা  সাদেক  রোডের  ১০৯  নম্বর  বাড়িতে  জন্ম  নেন  মতিউর  রহমান৷  তারিখ  ২৯  অক্টোবর,  বুধবার,  মধ্যরাত্রি৷  মা  সৈয়দা  মোবারুকুন্নেসা৷  বাবা  মৌলবি  আব্দুস  সামাদ৷  তিনি  পেশায়  ছিলেন  ঢাকা  কালেক্টর  অফিসের  সুপার৷  নরসিংদী  জেলার  রায়পুর  থানার  রামনগর  গ্রামে  ছিল  তাঁদের  পৈত্রিক  নিবাস৷  নয়  ছেলে  দুই  মেয়ের  পরিবারে  জন্ম  নেয়া  মতিউর  ছিলেন  অষ্টম৷  ছেলেবেলা  থেকেই  তিনি  সুস্বাস্থ্যের  অধিকারী,  দুরন্ত,  ডানপিটে৷  ১৯৫২  সালে  ঢাকা  কলেজিয়েট  স্কুলের  তৃতীয়  শ্রেণীতে  তাঁর  শিক্ষাজীবন  শুরু  হয়  ৷  ছেলেবেলা  থেকেই  তাঁর  মাঝে  ছিল  প্রতিভার  দ্যুতি৷

বাংলা  ভাষাকে  তথা  বাঙালির  মুখের  ভাষাকে  প্রতিষ্ঠা  করতে  গিয়ে  যাঁরা  বুকের  রক্ত  ঢেলে  ঢাকার  পিচঢালা  রাজপথ  রাঙিয়েছিলেন,  তাঁদের  গৌরবময়  ইতিহাস  ১৯৫২  সালের  ২১শে  ফেব্রুয়ারি৷  ব্রিটিশদের  কবল  থেকে  বেরিয়ে  আমাদের  স্বাধীনতার  দিকে  এগোবার  প্রথম  সোপান  ছিল  এটি৷  বাংলা  ভাষা  প্রতিষ্ঠার  দাবিতে  উত্তাল  সেই  দিনগুলোতে  মতিউরের  বয়স  মাত্র  এগারো  বছর৷  সে  সময়েই  ভাষার  জন্য  এ  আন্দোলন  দাগ  কাটে  তাঁর  মনে৷  নিজের  ভাষা  নয়,  এবং  চাপিয়ে  দেয়া  ভাষা  হওয়ায়  মতিউর  এসময়ে  তাঁর  পাঠের  অন্তর্গত  উর্দু  পড়তে  চাইতেন  না৷  সরাসরি  বলতেন,  'উর্দু  কেন  পড়ব?  আমাদের  ভাষা  তো  বাংলা৷'

মতিউরের  বাবা  মৌলবি  আব্দুস  সামাদ  ছিলেন  ছেলের  উচ্চশিক্ষার  ব্যাপারে  সচেতন৷  তিনি  তাঁকে  পশ্চিম  পাকিস্তানের  সারগোদা  পি.  এ.  এফ  স্কুলে  ভর্তি  করাতে  চাইলেন৷  পশ্চিম  পাকিস্তানিদের  বৈষম্যের  কারণে  বাঙালিদের  সেনা,  নৌ,  বা  বিমান  বাহিনীতে  ভর্তি  হওয়া  ছিল  খুবই  কঠিন৷  পূর্ব  ও  পশ্চিম  পাকিস্তানের  বাছাই  করা  স্কুলের  বাছাই  করা  ছাত্রদের  মাঝে  পরীক্ষা  হলো  ইংরেজি  মাধ্যমে৷  ভর্তির  যোগ্যতা  অর্জন  করে  মেধাবী  মতিউর  ১৯৫৬  সালে  সারগোদা  পি.  এ.  এফ  একাডেমি  স্কুলে  ভর্তি  হন৷  দিনটি  ছিল  ৫ই  এপ্রিল৷  মতিউর  থাকতে  শুরু  করলেন  টেমপেস্ট  হলে৷  নতুন  জায়গায়,  অচেনা  পরিবেশে  পাকিস্তানি  সহপাঠীদের  অসহযোগিতার  মাঝে  মতিউরের  সময়  কাটতে  লাগল৷  তিনি  কখনোই  উর্দু  ব্যবহার  করতেন  না৷  ডাইনিং  হলে  খাবার  খাওয়া  নিয়েও  অনেক  ব্যঙ্গ  বিদ্রূপ  সহ্য  করতে  হতো  তাঁকে৷  কিন্তু  তিনি  তাঁর  মেধা  দিয়ে,  সীমাহীন  সহ্যশক্তি  আর  প্রতিকূলতার  বিরুদ্ধে  জয়ী  হওয়ার  দুর্বার  আকাঙ্ক্ষা  দিয়ে  সকল  প্রতিকূলতা  জয়  করার  চেষ্টা  করেন  ৷  প্রথম  পরীক্ষাতেই  সবার  জবাব  দিয়ে  দিলেন  তিনি৷  খেলাধুলায়  প্রথম  স্থান  অধিকার  করলেন৷  ফুটবল,  হকি,  বাস্কেটবল  ও  সাঁতারে  সবাইকে  অবাক  করে  দিলেন  তাঁর  ক্রীড়ানৈপুণ্যে৷

১৯৬০  সালের  মে  মাসে  মতিউর  কৃতিত্বের  সাথে  ১ম  বিভাগে  মেট্রিক  পাস  করলেন  ডিস্টিংশনসহ৷  এরপর  দিলেন  ISSB  exam  .  এরপর ১৯৬১ সালের আগস্টের ১৫  তারিখে  তিনি  রিসালপুরে  পাকিস্তানি  বিমান  বাহিনীর  একাডেমিতে  ফ্লাইট  ক্যাডেট  হিসেবে  যোগ  দেন  জিডি  পাইলট  কোর্সে৷  পাকিস্তানিরা  সবসময়ই  তাঁকে  দাবিয়ে  রাখতে  চেয়েছে৷  বিমান  নিয়ে  পাকিস্তানি  পাইলটের  সাথে  ডগ  ফাইট  করতে  গিয়ে  সাজাও  ভোগ  করেছেন  মতিউর৷  কিন্তু  তবুও  মতিউর  ছিলেন  একজন  চৌকস  ক্যাডেট৷  তাঁর  একাগ্রতা,  ইচ্ছা  আর  মেধার  কাছে  প্রতিহত  হলো  সকল  বিপত্তি৷  এগিয়ে  গেলেন  তিনি৷

১৯৬৭  সালে  ফ্লাইট  লেফটেন্যান্ট  হয়ে  পদোন্নতি  হয়  মতিউর  রহমানের৷  ১৯৬৮  সালের  ১৯  এপ্রিল  বিয়ে  করেন  এক  সম্ভ্রান্ত  পরিবারের  মেয়ে  মিলি  খানকে৷  বিয়ের  কয়েকদিন  পরেই  মতিউর  চলে  যান  পাকিস্তানের  চাকলালা  বিমান  ঘাঁটিতে৷  ১৯৬৯  সালের ২৩  এপ্রিল জন্ম হয়  এ  দম্পতির  প্রথম  কন্যা  মাহিনের৷  পরের  বছর  ১৪  ডিসেম্বর জন্ম হয়  দ্বিতীয় সস্তান তুহিনের৷

১৯৪৭  সালে  প্রায়  ২০০  বছরের  ইংরেজ  শোষণের  অবসানের  মাধ্যমে  ভারত  ও  পাকিস্তানের  জন্ম৷  পাকিস্তান  গঠিত  হয়  পরষ্পর  বিচ্ছিন্ন  দুটি  ভূখন্ড  নিয়ে৷  পরষ্পর  বিচ্ছিন্ন  অবস্থান,  ভাষা  আর  সংস্কৃতি  নিয়ে৷  অবস্থানের  সাথে  সাদৃশ্য  রেখে  দেশের  নামের  শুরুতে  পূর্ব  ও  পশ্চিম  বসিয়ে  এ  দুই  ভূখন্ডের  পৃথক  নামকরণের  সাথে  সাথে  দেশটির  নয়া  শাসকগোষ্ঠী  শুরু  করে  দুটি  অংশের  প্রতি  দু'  ধরনের  ব্যবহার  এবং  শোষণের  নতুন  অধ্যায়৷  নাগরিক  অধিকারের  ক্ষেত্রে  পূর্ব  পাকিস্তানের  জনগণ  বৈষম্যের  শিকার  হতে  থাকে৷

আবারও  প্রতিবাদমুখর  বাঙালিরা  -  বায়ান্ন  দিয়ে  যার  শুরু৷  ধারাবাহিকতায়  আসে  একাত্তর৷  ১৯৭০  সালে  নির্বাচনে  জয়ী  হয়েও  সরকার  গঠনের  অধিকার  না  পাওয়ায়  এবার  ফুঁসে  ওঠে  বাঙালি৷  শুরু  হয়  অসহযোগ৷  আর  বাঙালিদের  সকল  অধিকার  আদায়ের  দাবিকে  গুঁড়িয়ে  দিতে  পাকিস্তানি  শাসকগোষ্ঠী  চালিয়েছিল  ২৫  মার্চের  হত্যাযজ্ঞ৷  শুরু  হয়  বাঙালিদের  প্রতিরোধ,  এবং  মুক্তির  জন্য  সংগ্রাম৷  রক্তের  বিনিময়ে  স্বাধীনতা  আদায়ের  যুদ্ধ৷  মুক্তিযুদ্ধ৷

১৯৭১  সালের  শুরুতে  সারাদেশ  যখন  উত্তাল,  তখন  জানুয়ারির  শেষ  সপ্তাহে  মতিউর  সপরিবারে  দুই  মাসের  ছুটিতে  আসেন  ঢাকা৷  ২৫  মার্চের  কালরাতে  মতিউর  ছিলেন  রায়পুরের  রামনগর  গ্রামে৷  তিনি  আর  স্থির  থাকতে  পারলেন  না৷  পাকিস্তান  বিমান  বাহিনীর  একজন  ফ্লাইট  লেফটেন্যান্ট  হয়েও  অসীম  ঝুঁকি  ও  সাহসিকতার  সাথে  ভৈরবে  একটি  ট্রেনিং  ক্যাম্প  খুললেন৷  যুদ্ধ  করতে  আসা  বাঙালি  যুবকদের  প্রশিক্ষণ  দিতে  থাকলেন৷  মুক্তিযোদ্ধাদের  বিভিন্ন  স্থান  থেকে  সংগ্রহ  করা  অস্ত্র  দিয়ে  গড়ে  তুললেন  একটি  প্রতিরোধ  বাহিনী৷

১৯৭১  সালের ১৪  এপ্রিল  পাকিস্তানি  বিমান  বাহিনী  'সেভর  জেড'  বিমান  থেকে  তাঁদের  ঘাঁটির  উপর  বোমাবর্ষণ  করে৷  মতিউর  রহমান  পূর্বেই  এটি  আশঙ্কা  করেছিলেন৷  তাই  ঘাঁটি  পরিবর্তনের  কারণে  ক্ষয়ক্ষতি  থেকে  রক্ষা  পান  তিনি  ও  তাঁর  বাহিনী৷  বিমান  আক্রমণ  শেষে  মতিউর  সবার  উদ্দেশে  বলেছিলেন,  'বিমান  থেকে  ভৈরবে  বোমাবর্ষণ  হয়েছে৷  পাইলটদের  মাঝে  এমনও  হতে  পারে  কেউ  আমার  ছাত্র৷  আমারই  ছাত্র  আজ  আমার  মাথায়  বোমা  ফেলছে৷  আমার  দেশকে  রক্তাক্ত  করছে৷'  মতিউর  মাটি  হাতে  নিয়ে  বলেছিলেন,  'আমার  নিজের  মাটির  মর্যাদা  আমি  রাখবোই৷  আমি  পাইলট৷  আমার  চাই  যুদ্ধবিমান৷  একটা  বিমান  পেলে  তাদের  দেখিয়ে  দিতাম৷  কারণ  বিমান  প্রতিহত  করতে  চাই  বিমান  বা  বিমান  বিধ্বংসী  কামান৷'

এরপর  মতিউর  ১৯৭১ সালের ২৩  এপ্রিল  ঢাকা  আসেন  ও  ৯  মে  সপরিবারে  করাচি  ফিরে  যান৷  যদিও  দুই  মাসের  ছুটিতে  এসে  চারমাস  পেরিয়ে  গেছে  ততদিনে৷  করাচি  পৌঁছে  মতিউর  লক্ষ্য  করেন  বাঙালি  অফিসারদের  সন্দেহের  চোখে  দেখা  হচ্ছে৷  তাঁকেও  তাঁর  নিজের  দায়িত্ব  না  দিয়ে  দেয়া  হলো  ফ্লাইট  সেফটি  অফিসারের  দায়িত্ব৷  মতিউরের  চিন্তা  তখন  কেবল  একটি  বিমানের৷  তিনি  পরিকল্পনা  শুরু  করেন৷  সহকর্মীদের  সাথে  স্বাভাবিক  ব্যবহার  করছেন  আর  খুঁজছেন  সুযোগ৷  পি.  আই.  এ-এর  একটি  বিমান  হাইজ্যাকের  পরিকল্পনা  ফাঁস  হয়ে  যাওয়ার  পর  বাঙালি  অফিসারদের  উপর  কড়া  নজর  রাখা  শুরু  হয়৷  বাঙালি  পাইলটদের  আকাশে  উড্ডয়নের  অনুমতি  বাতিল  করা  হয়৷  মতিউর  তখন  করাচির  মশরুর  বিমান  ঘাঁটির  বেস  ফ্লাইট  সেফটি  অফিসার৷  এর  আগে  মতিউর  ছিলেন  ফ্লাইট  ইন্সট্রাকটর৷  ছাত্রদের  বিমান  চালনার  প্রশিক্ষণ  দিতেন  তিনি৷  তাঁর  অনেক  পাকিস্তানি  ছাত্রের  একজন  রশিদ  মিনহাজ৷  সে  পুরাতন  ছাত্র৷  মতিউর  জানতেন,  সে  একা  আকাশে  উড্ডয়নের  অনুমতি  পাবে৷  তাই  তিনি  তাকে  টার্গেট করেন৷

১৯৭১  সালের  ২০  আগস্ট  শুক্রবার৷  ফ্লাইট  শিডিউল  অনুযায়ী  মিনহাজের  উড্ডয়ন  আজ৷  মতিউর  পূর্ব  পরিকল্পনা  মতো  অফিসে  এসে  শিডিউল  টাইমে  গাড়ি  নিয়ে  চলে  যান  রানওয়ের  পূর্ব  পাশে৷  সামনে  পিছনে  দুই  সিটের  প্রশিক্ষণ  বিমান  T-৩৩.  রশিদ মিনহাজ বিমানের সামনের  সিটে  বসে  স্টার্ট  দিয়ে  এগিয়ে  নিয়ে  আসছে৷  এবার  মতিউরের  পালা৷  মতিউর  হাত  তুলে  বিমান  থামালেন৷  হাতের  ইশারায়  বোঝানোর  চেষ্টা  করলেন,  বিমানের  পাখায়  সমস্যা৷  রশিদ  মিনহাজ  বিমানের  'ক্যানোপি'  খুলতেই  মতিউর  তাকে  ক্লোরোফর্ম  দিয়ে  অজ্ঞান  করে  ফেলে  বিমানের  পেছনের  সিটে  লাফিয়ে  উঠে  বসলেন৷  কিন্তু  জ্ঞান  হারাবার  আগে  মিনহাজ  বলে  ফেললেন,  'আই  হ্যাভ  বিন  হাইজ্যাক্ড৷'  ছোট  পাহাড়ের  আড়ালে  থাকায়  কেউ  দেখতে  না  পেলেও  কন্ট্রোল  টাওয়ার  শুনতে  পেল  তা৷  বিমানের  নিয়ন্ত্রণ  নিয়ে  মতিউর  বিমান  নিয়ে  ছুটে  চললেন৷  রাডারকে  ফাঁকি  দেবার  জন্য  নির্ধারিত  উচ্চতার  চেয়ে  অনেক  নিচ  দিয়ে  বিমান  চালাচ্ছিলেন  তিনি৷  যদিও  ততক্ষণে  এফ  ৮৬  ও  একটি  হেলিকপ্টার  তাঁকে  ধাওয়া  করা  শুরু  করে  কন্ট্রোল  টাওয়ারের  নির্দেশে৷  বিমানটি  যখন  ভারতীয়  সীমান্তের  দিকে  যাচ্ছে  তখন  মিনহাজের  জ্ঞান  ফিরে  আসে  এবং  সে  বাধা  দিতে  চেষ্টা  করে  ৷  সীমান্ত  থেকে  মাত্র  দুই  মিনিট  দূরত্বে  সিন্ধু  প্রদেশের  জিন্দা  গ্রামে  বালির  ঢিবির  উপর  আছড়ে  পড়ে  ব্লু  বার্ড  ১৬৬৷  হারিয়ে  যান  মতিউর  চিরদিনের  জন্য৷  মতিউরের  বিমান  হাইজ্যাকের  স্বপ্ন  সফল  হলো  না৷  এরপর  মতিউর  ও  মিনহাজের  লাশ  উদ্ধার  করা  হয়  এবং  কোন  প্রকার  ধর্মীয়  আনুষ্ঠানিকতা  ছাড়া  মসরুর  বিমান  ঘাঁটিতে  চতুর্থ  শ্রেণীর  কর্মচারীদের  জন্য  নির্ধারিত  স্থানে  মতিউরের  লাশ  দাফন  করা  হয়৷  তাঁর  কবরে  লেখা  হয়  'গাদ্দার'  বা  বিশ্বাসঘাতক৷

দীর্ঘ ৩৫  বছর পর ২০০৬  সালের ২৫  জুন  তাঁর  দেহাবশেষ  বাংলাদেশে  আনা  হয়৷  ২৬  জুন  মিরপুর  শহীদ  বুদ্ধিজীবী  কবরস্থানে  তাঁকে  সমাহিত  করা  হয়৷  দীর্ঘ  ৩৫  বছর অবহেলায় থাকলেও  মতিউর  ফিরে  আসেন  তাঁর  স্বপ্নের  স্বাধীন  দেশে৷  ঠাঁই  পান  এদেশের  মাটিতে৷  তিনি  আমাদের  দৃঢ়তা,  বীরত্ব  ও  স্বাধীন  চেতনার  প্রতীক  হয়ে  থাকবেন,  বাংলাদেশের  সমান্তরালে৷



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...