আগে চাই ব্রডব্যান্ড

ইন্টারনেট এখন মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। তা আমরা মানি বা না মানি, আমাদের কাজকর্মে আমরা সেটাকে প্রতিষ্ঠা করে চলেছি। এই যেমন কদিন আগে জানা গেল, সরকার সারা দেশের ২০ হাজার ৫০০ বিদ্যালয়ে এজ মোবাইল মডেম দিচ্ছে, অর্থাৎ ইন্টারনেট সেবা দিতে উদ্যোগ নিয়েছে।নিঃসন্দেহে এটি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে প্রশ্ন অন্য জায়গায়। সবাই কমবেশি জানেন, এজ মডেম হলো এখনকার ইন্টারনেটের সবচেয়ে কম গতির প্রতীক। অনেকে বলবেন, আমাদের সারা দেশে দ্রুতগতির ইন্টারনেট নেই, তাই এ কাজটি করা হচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য, এই বিদ্যালয়গুলোর একটি অংশ এমন সব জায়গায় অবস্থিত, যেখানে ইচ্ছে করলে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা সম্ভব। অনেক স্কুলে রয়েছে ল্যান্ডফোন এবং সেখানে রয়েছে বিটিসিএলের এডিএসএল সংযোগের সুবিধা। অনেক স্থানেই আমাদের আইএসপিগুলো ব্রডব্যান্ডের ব্যবস্থা করতে পারে। আর বেশ কিছু শহরে এখন ওয়াইম্যাক্সের সুবিধা রয়েছে। 


মোবাইলের নানা ধরনের হিসাব-নিকাশ, গতি, দ্রুতগতি, নেটওয়ার্কে ঢোকার কায়দা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে মোবাইল-সেবাকে কয়েকটি প্রজন্মে ভাগ করা হয়।

আমাদের দেশের মোবাইল-সেবা দ্বিতীয় প্রজন্মের। মোবাইলেও ইন্টারনেট-সেবা চালু রয়েছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইলে যেসব মোবাইল ইন্টারনেট-সেবা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে জিপিআরএসের সর্বোচ্চ গতি হলো সেকেন্ডে ১১৫ কিলোবাইট এবং এজের সর্বোচ্চ ২৩৭ কিলোবাইট। তবে তা আদর্শ অবস্থায়। বাস্তবে এই গতি অনেক কম। 

মোবাইলের পরের প্রজন্মটি তৃতীয় প্রজন্ম। এই প্রজন্মে প্রযুক্তির হেরফের ঘটিয়ে সেকেন্ডে সর্বনিম্ন ৪০০ কিলোবাইট থেকে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৯ মেগাবাইট (এক হাজার কিলোবাইটে এক মেগাবাইট) পর্যন্ত গতি পাওয়া যায়। আমাদের অপারেটরদের প্রায় সবাই এই প্রজন্মে সহজে মাইগ্রেট করতে পারবে, যার গতি হবে ১ দশমিক ৬ মেগাবাইট ডাউনলোড ও ৫০০ কিলোবাইট আপলোড! 



চতুর্থ প্রজন্ম:তাত্ত্বিকভাবে এতে ৩০০ মেগাবাইট পর্যন্ত গতির ইন্টারনেট সম্ভব। এর মধ্যে ২০০৯ সালে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে লং টার্ম ইভালুয়েশন ঘরানার চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল ব্রডব্যান্ড চালু হয়েছে। এর গতি কমপক্ষে ১০০ মেগাবাইট। 


এ তো গেল মোবাইল বা তারহীন ইন্টারনেটের কথা; আমাদের তারযুক্ত ইন্টারনেটের অবস্থা কেমন। ২০০৫ সালে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে আমরা দ্রুতগতির ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হলেও সাবমেরিন কেবলের ক্ষমতার একটি ক্ষুদ্র অংশ আমরা ব্যবহার করতে পারছি।

কেবল এই সরকারের আমলেই প্রতি মেগাবাইট ব্যান্ডউইডথের দাম ৩৮ হাজার থেকে কমিয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আমাদের ইন্টারনেটকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যে অবকাঠামো দরকার, সেটা সেভাবে গড়ে তোলা হয়নি। ফলে একমাত্র বিটিসিএল ইচ্ছে করলেই দেশের বেশির ভাগ স্থানে এডিএসএল প্রযুক্তি (টেলিফোন লাইনের ওপর দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ) ব্যবহার করে উচ্চগতির সুবিধা দিতে পারে। তবে, ঢাকার বাইরে অধিকাংশ ডিজিটাল এক্সচেঞ্জ হওয়া সত্ত্বেও এই সেবা গ্রহণের হার খুবই কম। এবং আমরা এও পরিষ্কার করে জানি, যেভাবে বিটিসিএল আমাদের সবাইকে টেলিফোন দিতে পারেনি, সেভাবে তারা সবাইকে এডিএসএলের মাধ্যমে ইন্টারনেটও দিতে পারবে না। কাজেই আমাদের ভরসা হলো বেসরকারি অপারেটর। 


সাধারণ মানুষের কাছে ইন্টারনেট-সেবা পৌঁছতে হলে সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সংযোগ আইএসপি হয়ে আমাদের বাসাবাড়িতে আসে। মাঝখানে এনটিটিএন লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান আবার নতুন করারোপ করে। ফলে, প্রথম চোটেই আইএসপিদের মেগাবাইট-প্রতি খরচ বাড়ে। আবার এই খাতে গোদের ওপর বিষফোড়া হলো ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর। অথচ বিদ্যুতের ওপর মূসক কিন্তু ৫ শতাংশ!


অন্যদিকে মোবাইল ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। এর মধ্যে কিন্তু বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির বিশাল উল্লম্ফন ঘটতে থাকে। মোবাইল যোগাযোগ দ্বিতীয় প্রজন্ম থেকে তৃতীয় প্রজন্ম হয়ে চতুর্থ প্রজন্মান্তরে প্রবেশ করে। কিন্তু আমাদের বিটিআরসি থেকে যায় ভিওআইপি ঠেকানোর পুলিশি ভূমিকায়। ফলে ঝুলে যায় দেশে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল-সেবা চালু করার কাজ। 


এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হয়েছিল। কারণ, ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে সরকার আইসিটি নীতিমালা, ২০০৯ এবং জাতীয় ব্রডব্যান্ড পলিসি, ২০০৯ প্রণয়ন করে। কিন্তু অচিরেই বিটিআরসি তার পুরোনো পুলিশি কাজে ফেরত চলে যায়। ফলে চার বছর হতে চললেও দেশে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল-সেবার কোনো সুরাহা হয়নি। ‘পাইলট’করার নাম করে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের হাতে তৃতীয় প্রজন্মের লাইসেন্স তুলে দেওয়া হয়েছে, যাদের মোট গ্রাহকের সংখ্যা সম্ভবত দেশে মোট মোবাইল গ্রাহকের ২ শতাংশও নয়! আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবা এখন বিশ্বের অনেক দেশেই ব্যবহূত হচ্ছে। সেটির তথাকথিত ‘পাইলট’করার কোনো প্রয়োজন নেই।


অন্যদিকে আমাদের যারা তারওয়ালা ইন্টারনেট সেবাদানকারী সংস্থা, তাদের পক্ষে গ্রামাঞ্চলে কিংবা পিছিয়ে পড়া শহরগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে উচ্চগতির ইন্টারনেট-সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না খরচের কারণে। অথচ, তৃতীয় প্রজন্মের ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রি করে সেই টাকায় দেশের আনাচ-কানাচে দ্রুতগতির ইন্টারনেট-সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া যেত।


একুশ শতকের একজন মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশে ইন্টারনেটের কোনো বিকল্প নেই। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো ব্রডব্যান্ডও এখন মানুষের মৌলিক চাহিদা হিসেবে দেশে দেশে স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে।আমাদের দেশেও যাদের ব্রডব্যান্ড আছে, তাদের বিকাশ যাদের ব্রডব্যান্ড নেই, তাদের চেয়ে অনেক বেশি। সেই কারণে গণমানুষের চাহিদার বড় অংশজুড়ে ইন্টারনেট।


বিশ্বব্যাপী এ ব্যাপারটি এখন সর্বজনীন স্বীকৃতি পেয়েছে। আর তা পেয়েছে বলেই ইন্টারনেটে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জনক টিম বার্নাস লি একটি নতুন সূচক বের করছেন, যার মাধ্যমে দেশের এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা বের করা যায়। এর মাধ্যমে একটি দেশের ডিজিটাল হওয়ার প্রক্রিয়ার স্থান নির্ণয় করা যায়। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ পড়ে রয়েছে অনেক পেছনে। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে নেপালের মতো দেশও আমাদের ছাড়িয়ে গেছে (৫২তম স্থানে)। অনেক এগিয়ে গেছে পাকিস্তান (৪৪), তার থেকেও অনেক এগিয়ে গেছে ভারত (৩৩)। ইন্টারনেট ব্যবহার এবং সমাজ-রাজনীতিতে এর প্রভাবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৬১টি দেশের মধ্যে ৫৫তম। আর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমরাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশ।

ইন্টারনেট এখন মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। তা আমরা মানি বা না মানি, আমাদের কাজকর্মে আমরা সেটাকে প্রতিষ্ঠা করে চলেছি। এই যেমন কদিন আগে জানা গেল, সরকার সারা দেশের ২০ হাজার ৫০০ বিদ্যালয়ে এজ মোবাইল মডেম দিচ্ছে, অর্থাৎ ইন্টারনেট সেবা দিতে উদ্যোগ নিয়েছে।নিঃসন্দেহে এটি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে প্রশ্ন অন্য জায়গায়। সবাই কমবেশি জানেন, এজ মডেম হলো এখনকার ইন্টারনেটের সবচেয়ে কম গতির প্রতীক। অনেকে বলবেন, আমাদের সারা দেশে দ্রুতগতির ইন্টারনেট নেই, তাই এ কাজটি করা হচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য, এই বিদ্যালয়গুলোর একটি অংশ এমন সব জায়গায় অবস্থিত, যেখানে ইচ্ছে করলে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা সম্ভব। অনেক স্কুলে রয়েছে ল্যান্ডফোন এবং সেখানে রয়েছে বিটিসিএলের এডিএসএল সংযোগের সুবিধা। অনেক স্থানেই আমাদের আইএসপিগুলো ব্রডব্যান্ডের ব্যবস্থা করতে পারে। আর বেশ কিছু শহরে এখন ওয়াইম্যাক্সের সুবিধা রয়েছে। 


মোবাইলের নানা ধরনের হিসাব-নিকাশ, গতি, দ্রুতগতি, নেটওয়ার্কে ঢোকার কায়দা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে মোবাইল-সেবাকে কয়েকটি প্রজন্মে ভাগ করা হয়।

আমাদের দেশের মোবাইল-সেবা দ্বিতীয় প্রজন্মের। মোবাইলেও ইন্টারনেট-সেবা চালু রয়েছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইলে যেসব মোবাইল ইন্টারনেট-সেবা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে জিপিআরএসের সর্বোচ্চ গতি হলো সেকেন্ডে ১১৫ কিলোবাইট এবং এজের সর্বোচ্চ ২৩৭ কিলোবাইট। তবে তা আদর্শ অবস্থায়। বাস্তবে এই গতি অনেক কম। 

মোবাইলের পরের প্রজন্মটি তৃতীয় প্রজন্ম। এই প্রজন্মে প্রযুক্তির হেরফের ঘটিয়ে সেকেন্ডে সর্বনিম্ন ৪০০ কিলোবাইট থেকে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৯ মেগাবাইট (এক হাজার কিলোবাইটে এক মেগাবাইট) পর্যন্ত গতি পাওয়া যায়। আমাদের অপারেটরদের প্রায় সবাই এই প্রজন্মে সহজে মাইগ্রেট করতে পারবে, যার গতি হবে ১ দশমিক ৬ মেগাবাইট ডাউনলোড ও ৫০০ কিলোবাইট আপলোড! 



চতুর্থ প্রজন্ম:তাত্ত্বিকভাবে এতে ৩০০ মেগাবাইট পর্যন্ত গতির ইন্টারনেট সম্ভব। এর মধ্যে ২০০৯ সালে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে লং টার্ম ইভালুয়েশন ঘরানার চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল ব্রডব্যান্ড চালু হয়েছে। এর গতি কমপক্ষে ১০০ মেগাবাইট। 


এ তো গেল মোবাইল বা তারহীন ইন্টারনেটের কথা; আমাদের তারযুক্ত ইন্টারনেটের অবস্থা কেমন। ২০০৫ সালে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে আমরা দ্রুতগতির ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হলেও সাবমেরিন কেবলের ক্ষমতার একটি ক্ষুদ্র অংশ আমরা ব্যবহার করতে পারছি।

কেবল এই সরকারের আমলেই প্রতি মেগাবাইট ব্যান্ডউইডথের দাম ৩৮ হাজার থেকে কমিয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আমাদের ইন্টারনেটকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যে অবকাঠামো দরকার, সেটা সেভাবে গড়ে তোলা হয়নি। ফলে একমাত্র বিটিসিএল ইচ্ছে করলেই দেশের বেশির ভাগ স্থানে এডিএসএল প্রযুক্তি (টেলিফোন লাইনের ওপর দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ) ব্যবহার করে উচ্চগতির সুবিধা দিতে পারে। তবে, ঢাকার বাইরে অধিকাংশ ডিজিটাল এক্সচেঞ্জ হওয়া সত্ত্বেও এই সেবা গ্রহণের হার খুবই কম। এবং আমরা এও পরিষ্কার করে জানি, যেভাবে বিটিসিএল আমাদের সবাইকে টেলিফোন দিতে পারেনি, সেভাবে তারা সবাইকে এডিএসএলের মাধ্যমে ইন্টারনেটও দিতে পারবে না। কাজেই আমাদের ভরসা হলো বেসরকারি অপারেটর। 


সাধারণ মানুষের কাছে ইন্টারনেট-সেবা পৌঁছতে হলে সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সংযোগ আইএসপি হয়ে আমাদের বাসাবাড়িতে আসে। মাঝখানে এনটিটিএন লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান আবার নতুন করারোপ করে। ফলে, প্রথম চোটেই আইএসপিদের মেগাবাইট-প্রতি খরচ বাড়ে। আবার এই খাতে গোদের ওপর বিষফোড়া হলো ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর। অথচ বিদ্যুতের ওপর মূসক কিন্তু ৫ শতাংশ!


অন্যদিকে মোবাইল ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। এর মধ্যে কিন্তু বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির বিশাল উল্লম্ফন ঘটতে থাকে। মোবাইল যোগাযোগ দ্বিতীয় প্রজন্ম থেকে তৃতীয় প্রজন্ম হয়ে চতুর্থ প্রজন্মান্তরে প্রবেশ করে। কিন্তু আমাদের বিটিআরসি থেকে যায় ভিওআইপি ঠেকানোর পুলিশি ভূমিকায়। ফলে ঝুলে যায় দেশে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল-সেবা চালু করার কাজ। 


এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হয়েছিল। কারণ, ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে সরকার আইসিটি নীতিমালা, ২০০৯ এবং জাতীয় ব্রডব্যান্ড পলিসি, ২০০৯ প্রণয়ন করে। কিন্তু অচিরেই বিটিআরসি তার পুরোনো পুলিশি কাজে ফেরত চলে যায়। ফলে চার বছর হতে চললেও দেশে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল-সেবার কোনো সুরাহা হয়নি। ‘পাইলট’করার নাম করে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের হাতে তৃতীয় প্রজন্মের লাইসেন্স তুলে দেওয়া হয়েছে, যাদের মোট গ্রাহকের সংখ্যা সম্ভবত দেশে মোট মোবাইল গ্রাহকের ২ শতাংশও নয়! আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবা এখন বিশ্বের অনেক দেশেই ব্যবহূত হচ্ছে। সেটির তথাকথিত ‘পাইলট’করার কোনো প্রয়োজন নেই।


অন্যদিকে আমাদের যারা তারওয়ালা ইন্টারনেট সেবাদানকারী সংস্থা, তাদের পক্ষে গ্রামাঞ্চলে কিংবা পিছিয়ে পড়া শহরগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে উচ্চগতির ইন্টারনেট-সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না খরচের কারণে। অথচ, তৃতীয় প্রজন্মের ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রি করে সেই টাকায় দেশের আনাচ-কানাচে দ্রুতগতির ইন্টারনেট-সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া যেত।


একুশ শতকের একজন মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশে ইন্টারনেটের কোনো বিকল্প নেই। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো ব্রডব্যান্ডও এখন মানুষের মৌলিক চাহিদা হিসেবে দেশে দেশে স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে।আমাদের দেশেও যাদের ব্রডব্যান্ড আছে, তাদের বিকাশ যাদের ব্রডব্যান্ড নেই, তাদের চেয়ে অনেক বেশি। সেই কারণে গণমানুষের চাহিদার বড় অংশজুড়ে ইন্টারনেট।


বিশ্বব্যাপী এ ব্যাপারটি এখন সর্বজনীন স্বীকৃতি পেয়েছে। আর তা পেয়েছে বলেই ইন্টারনেটে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জনক টিম বার্নাস লি একটি নতুন সূচক বের করছেন, যার মাধ্যমে দেশের এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা বের করা যায়। এর মাধ্যমে একটি দেশের ডিজিটাল হওয়ার প্রক্রিয়ার স্থান নির্ণয় করা যায়। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ পড়ে রয়েছে অনেক পেছনে। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে নেপালের মতো দেশও আমাদের ছাড়িয়ে গেছে (৫২তম স্থানে)। অনেক এগিয়ে গেছে পাকিস্তান (৪৪), তার থেকেও অনেক এগিয়ে গেছে ভারত (৩৩)। ইন্টারনেট ব্যবহার এবং সমাজ-রাজনীতিতে এর প্রভাবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৬১টি দেশের মধ্যে ৫৫তম। আর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমরাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশ।

ইন্টারনেট এখন মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। তা আমরা মানি বা না মানি, আমাদের কাজকর্মে আমরা সেটাকে প্রতিষ্ঠা করে চলেছি। এই যেমন কদিন আগে জানা গেল, সরকার সারা দেশের ২০ হাজার ৫০০ বিদ্যালয়ে এজ মোবাইল মডেম দিচ্ছে, অর্থাৎ ইন্টারনেট সেবা দিতে উদ্যোগ নিয়েছে।নিঃসন্দেহে এটি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে প্রশ্ন অন্য জায়গায়। সবাই কমবেশি জানেন, এজ মডেম হলো এখনকার ইন্টারনেটের সবচেয়ে কম গতির প্রতীক। অনেকে বলবেন, আমাদের সারা দেশে দ্রুতগতির ইন্টারনেট নেই, তাই এ কাজটি করা হচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য, এই বিদ্যালয়গুলোর একটি অংশ এমন সব জায়গায় অবস্থিত, যেখানে ইচ্ছে করলে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা সম্ভব। অনেক স্কুলে রয়েছে ল্যান্ডফোন এবং সেখানে রয়েছে বিটিসিএলের এডিএসএল সংযোগের সুবিধা। অনেক স্থানেই আমাদের আইএসপিগুলো ব্রডব্যান্ডের ব্যবস্থা করতে পারে। আর বেশ কিছু শহরে এখন ওয়াইম্যাক্সের সুবিধা রয়েছে। 


মোবাইলের নানা ধরনের হিসাব-নিকাশ, গতি, দ্রুতগতি, নেটওয়ার্কে ঢোকার কায়দা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে মোবাইল-সেবাকে কয়েকটি প্রজন্মে ভাগ করা হয়।

আমাদের দেশের মোবাইল-সেবা দ্বিতীয় প্রজন্মের। মোবাইলেও ইন্টারনেট-সেবা চালু রয়েছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইলে যেসব মোবাইল ইন্টারনেট-সেবা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে জিপিআরএসের সর্বোচ্চ গতি হলো সেকেন্ডে ১১৫ কিলোবাইট এবং এজের সর্বোচ্চ ২৩৭ কিলোবাইট। তবে তা আদর্শ অবস্থায়। বাস্তবে এই গতি অনেক কম। 

মোবাইলের পরের প্রজন্মটি তৃতীয় প্রজন্ম। এই প্রজন্মে প্রযুক্তির হেরফের ঘটিয়ে সেকেন্ডে সর্বনিম্ন ৪০০ কিলোবাইট থেকে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৯ মেগাবাইট (এক হাজার কিলোবাইটে এক মেগাবাইট) পর্যন্ত গতি পাওয়া যায়। আমাদের অপারেটরদের প্রায় সবাই এই প্রজন্মে সহজে মাইগ্রেট করতে পারবে, যার গতি হবে ১ দশমিক ৬ মেগাবাইট ডাউনলোড ও ৫০০ কিলোবাইট আপলোড! 



চতুর্থ প্রজন্ম:তাত্ত্বিকভাবে এতে ৩০০ মেগাবাইট পর্যন্ত গতির ইন্টারনেট সম্ভব। এর মধ্যে ২০০৯ সালে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে লং টার্ম ইভালুয়েশন ঘরানার চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল ব্রডব্যান্ড চালু হয়েছে। এর গতি কমপক্ষে ১০০ মেগাবাইট। 


এ তো গেল মোবাইল বা তারহীন ইন্টারনেটের কথা; আমাদের তারযুক্ত ইন্টারনেটের অবস্থা কেমন। ২০০৫ সালে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে আমরা দ্রুতগতির ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হলেও সাবমেরিন কেবলের ক্ষমতার একটি ক্ষুদ্র অংশ আমরা ব্যবহার করতে পারছি।

কেবল এই সরকারের আমলেই প্রতি মেগাবাইট ব্যান্ডউইডথের দাম ৩৮ হাজার থেকে কমিয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আমাদের ইন্টারনেটকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যে অবকাঠামো দরকার, সেটা সেভাবে গড়ে তোলা হয়নি। ফলে একমাত্র বিটিসিএল ইচ্ছে করলেই দেশের বেশির ভাগ স্থানে এডিএসএল প্রযুক্তি (টেলিফোন লাইনের ওপর দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ) ব্যবহার করে উচ্চগতির সুবিধা দিতে পারে। তবে, ঢাকার বাইরে অধিকাংশ ডিজিটাল এক্সচেঞ্জ হওয়া সত্ত্বেও এই সেবা গ্রহণের হার খুবই কম। এবং আমরা এও পরিষ্কার করে জানি, যেভাবে বিটিসিএল আমাদের সবাইকে টেলিফোন দিতে পারেনি, সেভাবে তারা সবাইকে এডিএসএলের মাধ্যমে ইন্টারনেটও দিতে পারবে না। কাজেই আমাদের ভরসা হলো বেসরকারি অপারেটর। 


সাধারণ মানুষের কাছে ইন্টারনেট-সেবা পৌঁছতে হলে সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সংযোগ আইএসপি হয়ে আমাদের বাসাবাড়িতে আসে। মাঝখানে এনটিটিএন লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান আবার নতুন করারোপ করে। ফলে, প্রথম চোটেই আইএসপিদের মেগাবাইট-প্রতি খরচ বাড়ে। আবার এই খাতে গোদের ওপর বিষফোড়া হলো ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর। অথচ বিদ্যুতের ওপর মূসক কিন্তু ৫ শতাংশ!


অন্যদিকে মোবাইল ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। এর মধ্যে কিন্তু বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির বিশাল উল্লম্ফন ঘটতে থাকে। মোবাইল যোগাযোগ দ্বিতীয় প্রজন্ম থেকে তৃতীয় প্রজন্ম হয়ে চতুর্থ প্রজন্মান্তরে প্রবেশ করে। কিন্তু আমাদের বিটিআরসি থেকে যায় ভিওআইপি ঠেকানোর পুলিশি ভূমিকায়। ফলে ঝুলে যায় দেশে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল-সেবা চালু করার কাজ। 


এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হয়েছিল। কারণ, ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে সরকার আইসিটি নীতিমালা, ২০০৯ এবং জাতীয় ব্রডব্যান্ড পলিসি, ২০০৯ প্রণয়ন করে। কিন্তু অচিরেই বিটিআরসি তার পুরোনো পুলিশি কাজে ফেরত চলে যায়। ফলে চার বছর হতে চললেও দেশে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল-সেবার কোনো সুরাহা হয়নি। ‘পাইলট’করার নাম করে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের হাতে তৃতীয় প্রজন্মের লাইসেন্স তুলে দেওয়া হয়েছে, যাদের মোট গ্রাহকের সংখ্যা সম্ভবত দেশে মোট মোবাইল গ্রাহকের ২ শতাংশও নয়! আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবা এখন বিশ্বের অনেক দেশেই ব্যবহূত হচ্ছে। সেটির তথাকথিত ‘পাইলট’করার কোনো প্রয়োজন নেই।


অন্যদিকে আমাদের যারা তারওয়ালা ইন্টারনেট সেবাদানকারী সংস্থা, তাদের পক্ষে গ্রামাঞ্চলে কিংবা পিছিয়ে পড়া শহরগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে উচ্চগতির ইন্টারনেট-সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না খরচের কারণে। অথচ, তৃতীয় প্রজন্মের ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রি করে সেই টাকায় দেশের আনাচ-কানাচে দ্রুতগতির ইন্টারনেট-সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া যেত।


একুশ শতকের একজন মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশে ইন্টারনেটের কোনো বিকল্প নেই। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো ব্রডব্যান্ডও এখন মানুষের মৌলিক চাহিদা হিসেবে দেশে দেশে স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে।আমাদের দেশেও যাদের ব্রডব্যান্ড আছে, তাদের বিকাশ যাদের ব্রডব্যান্ড নেই, তাদের চেয়ে অনেক বেশি। সেই কারণে গণমানুষের চাহিদার বড় অংশজুড়ে ইন্টারনেট।


বিশ্বব্যাপী এ ব্যাপারটি এখন সর্বজনীন স্বীকৃতি পেয়েছে। আর তা পেয়েছে বলেই ইন্টারনেটে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জনক টিম বার্নাস লি একটি নতুন সূচক বের করছেন, যার মাধ্যমে দেশের এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা বের করা যায়। এর মাধ্যমে একটি দেশের ডিজিটাল হওয়ার প্রক্রিয়ার স্থান নির্ণয় করা যায়। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ পড়ে রয়েছে অনেক পেছনে। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে নেপালের মতো দেশও আমাদের ছাড়িয়ে গেছে (৫২তম স্থানে)। অনেক এগিয়ে গেছে পাকিস্তান (৪৪), তার থেকেও অনেক এগিয়ে গেছে ভারত (৩৩)। ইন্টারনেট ব্যবহার এবং সমাজ-রাজনীতিতে এর প্রভাবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৬১টি দেশের মধ্যে ৫৫তম। আর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমরাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশ।



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...