স্বাদে, গন্ধে ও পুষ্টিতে আম অতুলনীয়। আম সব ফলের সেরা। তাই আমকে 'ফলের রাজা' বলা হয়। বাংলাদেশে প্রায় সব জেলাতেই আম উৎপাদিত হয়। প্রধানত উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলো যেমন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, যশোর ও সাতক্ষীরাতে উৎকৃষ্টমানের আম উৎপাদিত হয়।
কিন্তু ফলটি চাষাবাদে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের চারদিকে তাকালে বোঝা যায় আমের মৌসুম শুরু হয়েছে। কিছু গাছে মুকুল বেশ বড় হয়েছে আবার কিছু গাছে কেবলমাত্র মুকুল বের হওয়া শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে আম গাছে সঠিক পরিচর্যা ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমের ফলন মারাত্মকভাবে হ্রাস পেতে পারে।
হপার বা শোষক পোকা: এই পোকা এবং নিম্ফ (পোকার বাচ্চা) অন্ধকারে থাকতে বেশ পছন্দ করে এবং গাছের কচি পাতা ও কচি ডাল এবং ফুলের মুকুল থেকে রস চুষে খায়। মুকুলের রস চোষার সাথে সাথে এরা মলদ্বার দিয়ে আঠালো মধুরস ত্যাগ করে যা মুকুলের ফুল ও পাতায় আটকে যায়। এই আঠালো পদার্থে ফুলের পরাগরেণু আটকে গিয়ে ফুলের পরাগ সংযোগ ক্রিয়া ব্যাহত হয়।
ফুল ও পাতার মধুরসে ছত্রাক জন্মে এবং শুটি মোল্ড রোগের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে মুকুল থেকে ফুল কালো হয়ে ঝরে পড়ে। এই পোকা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গাছের ভিতরের অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছাঁটাই করে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া গাছে মুকুল আসার আগে একবার এবং আমের আকার যখন মোটর শুটির দানার মতো হবে তখন আর একবার সাইপারমেথ্রিন বা কার্বারিল গ্রুপের কীটনাশক দ্বারা গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
গাছে মুকুল আসার ১০-১৫ দিনের মধ্যে কিন্তু একক ফুল ফোটার আগ মুহূর্তে (পুষ্প মঞ্জুরীর দৈর্ঘ ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা হলে) এবং আমের আকার যখন মোটরশুটির দানার মতো হবে তখন আর একবার প্রতি লিটার পানির সাথে ১.৫-২.০ মিলি রিপকর্ড/সিমবুশ/ডেসিস এবং একই পানির সাথে ২.০ গ্রাম হারে ডায়থেন এম-৪৫ মিশিয়ে পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। পাউডারী মিলডিউ: পাউডারী মিলডিউ আমের একটি মারাত্মক রোগ।
এই রোগ অবশ্য প্রতিবছর একই হারে দেখা যায় না। আবহাওয়া অনুকূল হলেই এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে। মুকুল আসার সময় যদি ঘন কুয়াশা হয় এবং সাথে মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করে তাহলে এই রোগ খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে। এই রোগ প্রধানত মুকুল ও কচি আমে দেখা যায়। প্রথমে আমের মুকুলের শীষ প্রান্তে ধূসর বা সাদা পাউডারের মতো আবরণ দেখা যায়।
এই রোগের আক্রমণ বেশি হলে প্রথমে মুকুল থেকে ফুল ঝরে পড়ে, পরবর্তীতে মুকুলের ডালপালাও ঝরে পড়ে। ফলে মুকুলে কোনো আম থাকে না। এই রোগ দমনের জন্য সালফার জাতীয় (থিওভিট) ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ২.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে। পরগাছা দমন: আম গাছে পরগাছা জন্মাতে দেখা যায়।
পরগাছা আম গাছের খাদ্যরস শোষণ করে গাছের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। ফলে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ব্যাহত হয়। আমগাছে পরগাছা দেখা মাত্রই কেটে ফেলতে হবে। মুকুল ভাঙন: কলমের গাছের বয়স ৪/৫ বছর না হওয়া পর্যন্ত মুকুল ভেঙে দিতে হবে। ডাল ছাঁটাইকরণ: কলমের গাছের প্রধান কা-টি যেন সোজাভাবে ১.০ থেকে ১.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে সেদিকে খেয়াল রেখে মাটির সমতল থেকে ১.৫ মিটারের মধ্যকার সব অপ্রয়োজনীয় ডালপালা কেটে ফেলতে হবে।