টমেটো কাঁচাপাকা আঙ্গুর নামে পরিচিত

দূর থেকে কেউ দেখলে ভাববেন তা আঙ্গুর ফল, কিন্তু না আঙ্গুর নয়টমেটো। তবে স্থানীয়দের ভাষায় আঙ্গুর টমেটো। মাচায় ঝুলে আছে কাঁচা পাকা টমেটো। ঐ টমেটো গ্রীষ্মকালীন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউটের অধীনস্থ উদ্যানতত্ত্ব গবেষনা কেন্দ্রর সবজি বিভাগ বিভিন্ন প্রকার সবজির নতুন নতুন উচ্চফলনশীল ও গুনগত মানসম্পন্ন জাত উদ্ভাবন করছে।

 

এর মধ্যে জনপ্রিয় সবজি টমেটোর বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছে। গবেষনার ফলাফল হিসেবে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর কয়েকটি জাত কৃষক পর্যায়ে চাষের জন্য মুক্তায়িত করা হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জাতগুলো বাংলাদেশের আবহাওয়ায় টমেটো উৎপাদনে সক্ষম। যশোর অঞ্চলে পরীক্ষামূলক টমেটো আবাদ ও উৎপাদন করে বিরাট সফলতা এসেছে।

 

কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। ভোক্তারা গ্রীষ্মকালেও টমেটোর স্বাদ গ্রহনের সুযোগ পাচ্ছেন। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দাদপুর এলাকার বলরামপুর গ্রামের ৭ জন কৃষক মোঃ নূর মোহাম্মদ, মোঃ তালেব আলী, মোঃ আমজাদ হোসেন, মোঃ আব্দুল অয়াহেদ ও মোঃ মোকাদ্দেস আলী জানালেন, তারা স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের মত এলাকায় বহু কৃষক গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদ ও উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

 

 একজন চাষী মাত্র ৭ শতক জমিতে টমেটো চাষ করে প্রায় ৬০ হাজার টাকা আয় করেছেন, যা অভাবনীয়। সংশ্লিষ্টদের হিসাব মতে, প্রতিবিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদ করে প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয় করতে পারছে সকল খরচ বাদ দিয়ে। গ্রীষ্মকালীন টমেটো শীতকালীন টমেটোর মতোই স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। নতুন জাতের উৎপাদিত গ্রীষ্মকালীন টমেটো শীতকালীন টমেটোর চেয়েও বেশী স্বাদের বলে ভোক্তারা জানিয়েছেন।

 

 বাজারে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। মাঠে মাঠে চাষীদের মাঝে টমেটোর উৎপাদন প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান দেয়ার ব্যবস্থা কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউট। এর ফলে চাষীরা গ্রীষ্মকালীন টমেটো ব্যাপক ভাবে আবাদ ও উৎপাদন করতে মাঠে নেমেছে। টমেটো চাষীরা জানিয়েছেন,চারা লাগানোর ৬০ দিনের মধ্যে পাকা টমেটো জমি থেকে সংগ্রহ করা হয়। কাঁচা টমেটো সংগ্রহ হয় তার আগেই।


  প্রতি গাছ থেকে ৩/৪ সপ্তাহ ধরে ৫/৬ বার টমেটো সংগ্রহ হয়। টমেটো গাছে পোকা মাকড়ের আক্রমণ খুব একটা হয় না। সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় যা একেবারেই কম। সে জন্য আবাদ খরচ ও অন্যান্য সবজি চেয়ে তুলনামূলক ভাবে অনেক কম হয়। কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা বলেছেন, বর্তমানে উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাতের মধ্যে বারি টমেটো ৩ ও বারি টমেটো ৪ নামের আরো ২ টি জাত মুক্তায়িত করার জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডে পাঠানো হয়েছে।

 

বর্তমানে চাষাবাদ হচ্ছে হাইব্রিড টমেটো সি-৩৬ ও সি-৫৫। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,নতুন উদ্ভাবিত হাইব্রিড টমেটোর জাতগুলো উচ্চ তাপমাত্রা সহিঞ্চু হওয়ায় গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে টমেটো উৎপাদনে বিরাট সুফল আনা সম্ভব হয়েছে।

 

যশোরের দাদপুর এলাকার মাঠে মাঠে বেশ কয়েকজন উদ্যেগী চাষী কয়েকবছর ধরে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জাত চাষ করে আসছে।চাষীরা জানান, গত গ্রীষ্ম মৌসুম থেকে শুরু করে টমেটোর চাষ বর্তমান গ্রীষ্ম মৌসুম পর্যন্ত বিশেষ পরিচর্যার মাধ্যেমে টমেটো উৎপাদন করে বাজারজাত করে আসছে চাষীরা।

 

বাংলাদেশে এই প্রথম গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদ ও উৎপাদন করে যশোরের চাষীরা সফল হওয়ায় গোটা এলাকায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদ ও উৎপাদনের দিকে ঝুকে পড়ছে সবজি চাষীরা। এর আগে যশোরের দাদপুরে সরেজমিনে পরিদর্শন করে পলিথিনের ছাউনী দিয়ে মাচায় উৎপাদিত গ্রীষ্মকালীন টমেটো দেখে গেছেন কৃষি মন্ত্রীসহ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তারা।

 

কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তারা যশোরের সাংবাদিকদের দাদপুর গ্রামের মাঠে নিয়ে মাচায় উৎপাদিত গ্রীষ্মকালীন টমেটো  দেখিয়েছেন। সাংবাদিকরাও অভিভূত হয়েছেন। দূর থেকে দৃশ্যেটি একরকম যে,আঙ্গুর ঝুলে আছে। কাছে গেলে দেখা গেছে কাঁচাপাকা ছোট বড় টমেটো। বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা জানান,নতুন এই হাইব্রিড টমেটো জাত ও বছর ব্যাপি চাষের এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সারা বছরব্যাপী টমেটোর চাহিদা স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত টমেটো দিয়েই মিটানো সম্ভব হবে।

 

ক্রমাগত ভাবে সারাদেশে নতুন টমেটোর জাত ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তাতে দেশ বিরাট উপকৃত হবে। পুরোদমে চাষাবাদ সম্ভব হলে দেশের চাহিদা মিটানোর পর বিদেশেও রফতানি করা  সম্ভব হবে টমেটো। কৃষি বিজ্ঞানীরা আরো জানান,বর্ষা মৌসুমে টমেটোর গাছ বাচিয়ে রাখতে বাশেঁর কাঠামোতে নউকার ছিয়ের আকৃতি করে স্বচ্ছ পলিথেনের চাউনি দিতে হয়। পরর্বতিতে ৩ মাসের মাথায় অক্টোবরের দিকে পলিথিন ছিঁড়া নষ্ট হয়।

 

তখন বৃষ্টি পাত কমে যায়। এ সময় গাছের উচ্চতা অনেক বেশী বৃদ্ধি পেয়ে লতিয়ে যায়। ছেঁড়া পলিথিন ফেলে দিয়ে বাশের কাঠামো রেখে দিয়ে লতিয়ে যাওয়া টমেটো গাছের মাচা হিসেবে কাজ করে। মাচা সদৃশ্য ট্যানেলের নীচে টমেটোর ফলন চোখে পড়ার মতো। নতুন চাষ পদ্ধতিতে নতুন জাতের গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ ও উৎপাদন গোটা অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে।



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...