তিনি বংশেও কাজী নন আবার পেশায়ও কাজী নন, তবে ফল চাষে সার্থক কাজের কাজী। ২০ বিঘা জমিতে কুল ও পেয়ারার মিশ্র বাগান করে তিনি আজ লাখপতি। বাবার সম্পত্তিতে নয়, অন্যের জমি লিজ নিয়ে তাতে শ্রম খাঁটিয়ে আজ লাখপতি হয়েছেন সফল চাষি খন্দকার আবদুল বাতেন। এলাকায় ফল বাগান করায় তিনি একজন মডেল চাষি।
এক দশক আগের কথা : বছর দশেক আগে পাবনার সুজানগর উপজেলার দাঁড়িয়াপুর গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে আবদুল বাতেন ছিলেন অনেকটা বেকার। ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাস করে সংসার দেখাশুনা করতেন। তিনি শখের বশে ছোট একটি আম বাগান করেছিলেন। এ সময় টেবুনিয়া হর্টিকালচার সেন্টার থেকে কাজী পেয়ারা বাগান করার পরামর্শ দেয়া হয়। তাদের পরামর্শে পাবনা-নগরবাড়ী মহাসড়কের পাশে ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে কাজী পেয়ারার আবাদ শুরু করেন।
সাফল্যের ছোঁয়া : শুরুর দিকে প্রতি বিঘায় ৫০ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি করেন। ১০ বিঘায় আয় হয় পাঁচ লাখ টাকা। পাইকারি ৬০০ টাকা মণ আর খুচরা ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতেন। এখন প্রতি বিঘায় আসছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। পেয়ারা চাষে অভাবনীয় সাফল্য লাভের পর ছয় বছর আগে বাগান সম্প্রসারণ করেন।
মিশ্র বাগান : বাগান শুধু সম্প্রসারণই নয়, পাঁচ বিঘা জমিতে শুধু কুল, আর পেয়ারা বাগানের মিশ্র ফল হিসেবে কুলের গাছ লাগান। এখন সব মিলিয়ে তার বাগানের পরিমাণ ২০ বিঘা। মোট কুল গাছ লাগিয়েছেন ১ হাজার ৫০টি। খন্দকার বাতেন জানালেন, প্রতিটি পূর্ণাঙ্গ গাছে তিন মণ ফলন হওয়ার কথা। সে হিসাবে বিঘায় ৩০টি গাছে ৯০ মণ ফলন আসবে যার বাজার মূল্য এক লাখ টাকার ওপর। গাছ পূর্ণতা না পাওয়ায় এখন বিঘাপ্রতি গড়ে ৩০ মণ ফলন আসছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা।
কলম বিক্রি : প্রতিটি নারকেলী কুলের কলম ১০০ টাকায় বিক্রি করেন। প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কলম বিক্রি করেন। পেয়ারা গাছও বিক্রি হয় যথেষ্ট পরিমাণে।
পরিচর্যা : গাছ পরিচর্যার সমস্যা সম্পর্কে জানান, এখন গাছের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি কোন গাছে কী দরকার। কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীদের তদারকি তো রয়েছেই। সারা বছর গাছে সেচসহ যত্ন- আত্তি করার জন্য ১০ জন শ্রমিক প্রায় সারা বছর কাজ করে। আর দুই জন শ্রমিক স্খায়ীভাবে কাজ করে। গাছ ও ফলগাছ নিরাপদ রাখতে বাগানের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। যত্ন -আত্তির মাঝেও হলো প্রতি বছর ভাইরাসের আক্রমণে কিছু গাছ নষ্ট হয়ে যায়। সেখানে সেক্ষেত্রে নতুন করে গাছ লাগানো হয়।
বিপণন ও মুনাফা : অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাপারিরা বাগানে এসে পাইকারি দরে পেয়ারা ও কুল কিনে নিয়ে যায়। এ অঞ্চলে সংরক্ষণাগার না থাকায় অনেক সময় কম দামেই ফল বাজারজাত করতে হয়। কিছু প্রতিবাধকতার মাঝেও ভালো মুনাফা পেয়ে আবদুল বাতেনের সংসারের চেহারা পাল্টে গেছে। তিনি জানান, শুধু কাজী পেয়ারা বিক্রি করেই তিনি ২৬ লাখ টাকা দিয়ে দু’টি ট্রাক কিনেছেন।
শেষ কথা : চাকরি না করেই খন্দকার আব্দুল বাতেন ফল বাগান তৈরির মাধ্যমে সাফল্য লাভ করেছেন। সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করেছেন। তার সাফল্যে সামাজিকভাবেও অনেকে আগ্রহী হয়ে ফলের আবাদ শুরু করেছেন। নিজ সাফল্যের দিকে তাকিয়ে তিনি শিক্ষিত তরুণদের শুধু চাকরির আশায় না থেকে ফল চাষে ভাগ্য গড়ার পরামর্শ দেন। নিজ জমি না থাকলে লিজ নিতে বলেন, যেভাবে তিনি জমি লিজ নিয়ে সফল হয়েছেন।