মাটি ও আবহাওয়া জলাবদ্ধতামুক্ত উঁচু ও মাঝারি উঁচু এমন জমিতে কালোজিরা চাষ করা হয়ে থাকে।
দো-আঁশ থেকে বেলে দো- আঁশ মাটি এটি চাষের জন্য উত্তম। জমিতে পানি সেচ এবং নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা ভালো। শুষ্ক ও ঠান্ডা আবহাওয়া কলোজিরা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ রোগ বালাইয়ের বিস্তারের জন্য অনুকূল। ফুল ফোটার সময়ে বৃষ্টি হলে কালোজিরার ফলন কমে যায়। জমি তৈরি সাধারণত ৩-৪টি চাষ করে মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে এবং আগাছা পরিষ্কার করে জমি তৈরি করা হয়।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ জমিতেই জৈব সারের ঘাটতি রয়েছে। তাই সম্ভব হলে জৈব সার বেশি পরিমাণে দেয়াই ভালো।
নিম্নে হেক্টর প্রতি জৈব ও অজৈব সারের পরিমাণ উল্লেখ করা হলোঃ
সারের নাম পরিমাণ
পচা গোবর ৫-১০ টন
ইউরিয়া ১২৫ কেজি
টিএসপি ১০০ কেজি
এমপি ৭৫ কেজি।
জমি চাষের পূর্বে সম্পূর্ণ পচা গোবর সার জমিতে ছিটিয়ে দিতে হয়। অর্ধেক ইউরিয়া, সম্পূর্ণ টিএসপি এবং এমপি সার শেষ চাষের আগে জমিতে ছিটিয়ে ভালোভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয়। ইউরিয়া সার বীজ বপনের ৪০ দিন পরে আগাছা নিড়ানোর পর উপরি প্রয়োগ করতে হয়। মাটিতে প্রয়োজনীয় রস না থাকলে সার উপরি প্রয়োগের পর সেচ দেয়া ভালো। অন্যান্য পরিচর্যা আগাছা দমন গাছের দৈহিক ও ফলন বৃদ্ধির জন্য সময়মত আগাছা নিড়ানো ও গাছ পাতলাকরণ অতীব জরুরি। সাধারণ বীজ ১৫-২০ দিন পর আগাছা নিড়ানো উচিত।
উপরি বর্ণিত গাছ থেকে গাছের দূরত্ব বজায় রাখার জন্য পাতলাকরণ করা উচিত। এ ফসলের জন্য ২-৩টি নিড়ানো ও পাতলা করণের কাজ করতে হয়। সেচ ও নিষ্কাশন মাটিতে রস না থাকলে বীজ বপনের পর হালকা সেচ দেয়া ভালো। মাটির ধরন ও বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে জমিতে মোট ২-৩টি সেচ দেয়া যেতে পারে। রোগ ও পোকা-মাকড় দমন কালোজিরার জমিতে তেমন একটা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। তবে কিছু ছত্রাকের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়।
ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিলে রিডোমিল গোল্ড বা ডাইথেন এম-৪৫ নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ২-৩ বারে স্প্রে করা যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহঃ
বীজ বপনের ১৩৫-১৪৫ দিনের মধ্যে গাছ হলদে বর্ণ ধারণ করে এবং এ সময় কালোজিরা সংগ্রহ করতে হয়। এ সময় গাছ উত্তোলনের পর শুকোনোর জন্য রোদে ছড়িয়ে দিতে হয়। মাড়াই, ঝাড়াই ও সংরক্ষণ হাত দ্বারা ঘসে কিংবা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বীজ বের করা হয়। বীজগুলো পরিষ্কার করে এবং ভালোভাবে রোদে শুকানোর পর ঠান্ডা করে পলিথিনের ব্যাগ/প্লাস্টিকের পাত্রে/টিনের কৌটায় রেখে মুখ ভালোভাবে বন্ধ করে রাখতে হয়। চটের বস্তায় কলোজিরা রাখলে ঠান্ডা ও শুষ্ক জায়গায় রেখে সংরক্ষণ করতে হয়।