কৈ - মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল

কৈ মাছ সাধারণত: খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, পুকুর-দিঘী, ডোবা-নালা এবং নিমজ্জিত ধান ক্ষেতে দেখতে পাওয়া যায়। এ মাছগুলো আড়ালিয়া জাতীয় উদ্ভিদ যেমন কলমি, হেলেঞ্চা এবং জলজ অন্যান্য ঝোঁপ-ঝাড় ও ডাল-পালা অধ্যুষিত জলাশয়ে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করতে পছন্দ করে। কৈ মাছ গর্তে নিমজ্জিত গাছের গুড়ির তলায় বা সুড়ঙ্গে বসবাস করে এবং স্রোতহীন আবদ্ধ পানিতে বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

 

প্রাকৃতিক প্রজনন


  • কৈ মাছ প্রথম বছরেই প্রজননক্ষম হয়, সর্বোচ্চ ১৭ সেমি. লম্বা হয় এবং বছরে একবার প্রজনন করে।
  • কৈ মাছের সর্বানুকুল প্রজননকাল এপ্রিল-জুলাই মাস। তবে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্তও প্রজনন করে থাকে।
  • প্রজনন শুরুর পূর্বে বর্ষার বৃষ্টি নামলেই এদেরকে প্রজননের জন্য অভিপ্রায়ন করতে দেখা যায় এবং অভিপ্রায়ন করে এরা ধান ক্ষেত, ডোবা, পকুর-নালা, খাল-বিল ইত্যাদি স্থানে চলে যায়। কৈ মাছ সাধারণত যে জায়গায় বসবাস করে সে জায়গায় প্রজনন করে না। তাই প্রজনন অভিপ্রায়নের মাধ্যমে স্থান বদল করে নেয়। অতঃপর নতুন স্থানে ঝোঁপ-ঝাড় জাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে ডিম ছাড়ে।
  • কৈ মাছের ডিম ভাসমান। তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে ১৮-২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিষিক্ত ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
  • বাচ্চা/রেণু পোনার কুসুমথলি ২/৩ দিনের মধ্যে ক্রমান্বয়ে শেষ হলে প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণ শুরু করে।

 

হরমোন ইনজেকশনের মাধ্যমে কৃত্রিম উপায়েও কৈ মাছের প্রজনন করানো যায়। বর্তমানে অনেক বেসরকারী হ্যাচারীতে কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সফলতা বৃদ্ধি লাভ করেছে। পুরুষ কৈ মাছের তুলনায় স্ত্রী কৈ মাছ আকারে কিছুটা বড় হয়। একটি ৮০-১০০ গ্রাম ওজনের কৈ মাছের ডিম ধারণ ক্ষমতা ৬,০০০- ৮,০০০ এর মধ্যে হয়ে থাকে।

 

  • ব্র ড প্রতিপালন: উন্নত মানের পোনা উৎপাদনের জন্য প্রজনন ঋতুর ৩-৪ মাস আগে থেকেই প্রাকৃতিক/উপযুক্ত উৎস থেকে ব্র“ড মাছ সংগ্রহ করে মজুদ পুকুরে রেখে ৩০-৩৫% আমিষ সমৃদ্ধ খাবার মাছের দেহ ওজনের ৩-৫% হারে প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি সপ্তাহে শতাংশ প্রতি ৪-৫ কেজি গোবর এবং ইউরিয়া ও টিএসপি সার ১০০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে নিয়মিতভাবে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। প্রজননকালে স্ত্রী কৈ মাছের গায়ের রং হালকা বাদামি ও বক্ষ পাখনা উজ্জল বাদামি বর্ণ ধারণ করে।
  • প্রজননের জন্য ইনজেকশন দেয়ার অন্ততঃ ৬ ঘন্টা পূর্বে ব্রড মাছ পুকুর থেকে সতকর্তার সাথে পরিবহণ করে হ্যাচারিতে এনে সিষ্টার্নে রেখে পানির ফোয়ারা দিতে হবে।
  • প্রজননের জন্য পুরুষ ও স্ত্রী উভয় মাছকে একটি করে হরমোন ইনজেকশন দিতে হয়। স্ত্রী মাছকে ৬-৮ মিলিগ্রাম পিজি/কেজি হারে ও পুরুষ মাছকে ২-৩ মিলিগ্রাম পিজি/কেজি হারে ইনজেকশন দেয়ার পর পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে ১:১ অনুপাতে হাপায় রেখে পানির কৃত্রিম ঝর্ণা প্রবাহ দিতে হবে।
  • সাধারণত ইনজেকশন দেয়ার ৬ ঘন্টা পর মাছ ডিম দিয়ে থাকে। ডিম ছাড়ার পর যত দ্রুত সম্ভব ব্র“ড মাছগুলোকে সর্তকতার সংগে হাপা থেকে সরিয়ে ১ পিপিএম মাত্রায় পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবনে গোসল করিয়ে পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।
  • সাধারণত ২২-২৪ ঘন্টা পর ডিম ফুটে রেণু পোনা বের হয়।
  • রেণুগুলোকে সিমেন্ট সিস্টার্ন বা মেটাল ট্রেতে স্থানান্তর করতে হবে এবং রেণুর ডিম্ব লি নিঃশেষিত হওয়ার পর খাবার হিসেবে ১-২ দিন ডিমের কুসুম/টিউবিফেক্স/আর্টিমিয়া খাওয়াতে হবে।

 

পোনা প্রতিপালন


  • কৈ মাছের পোনা প্রতিপালনের জন্য নার্সারি পুকুরের আয়তন ২৫-৩০ শতাংশ এবং গভীরতা ১-১.৫ মিটার হলে ভাল হয়।


HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...