খাচায় মাছ চাষ - নতুন দিগন্ত

চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে ভাসমান খাঁচায় মৎস্য চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ২০০২ সালে যেখানে মাত্র একজন ডাকাতিয়া নদীতে পরীক্ষামূলক খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেন সেখনে এখন ডাকাতিয়া নদীর দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দু’ পাড়ে কয়েকশ’ মৎস্য চাষী ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করছে। প্রতি বছর খাঁচায় মৎস্য চাষ প্রকল্প হতে এ জেলায় প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন মৎস্য উত্পাদন হচ্ছে।

 

চাঁদপুর সদর উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকার মোঃ হোসেন ২০০২ সাল প্রথম ১০টি খাঁচায় মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার দু’টি স্থানে ৪২ ও ২৫টি খাঁচায় মাছ (মনোসেক্স তেলাপিয়া) চাষ হচ্ছে। তার এই সাফল্য দেখে আস্তে আস্তে এই একই এলাকার হান্নান মিয়াজী ২০টি, জাকির খান ২৫টি, হুমায়ুন বেপারী ৪০টি, শাহআলম মাঝি ২৫টি, মফিজ বেপারী ২০টি খাঁচায় মাছ চাষ করছেন।

 

একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর মিয়াজী ২০০৬ সালে প্রথম ৭টি খাঁচা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে এই আলমগীর একশটি খাঁচায় মাছ চাষ করছেন।

 

ফরিদগঞ্জ উপজেলার সেকদী গ্রামের এক শিক্ষিত যুবক মোঃ মোশারফ হোসেন চৌধুরী মানিক লেখাপড়া শেষে বিদেশে চাকরির আশায় যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাত্ ২০০৮ সালে তিনি খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি ১০৭টি খাঁচায় মাছ চাষ করছেন। তার পাশাপাশি তিনি নিজ বাড়িতে একটি অত্যাধুনিক হ্যাচারি গড়ে তুলেছেন। প্রতি বছর তার এই হ্যাচারি হতে ১ কোটি থেকে ৩ কোটি পর্যন্ত পোনা ও রেণু বিক্রয় করা হচ্ছে। তিনি সাড়ে সাত একর জায়গার উপর মৎস্য চাষ, পোনা উত্পাদন কালচার, গবাদি পশু পালন ও বৃক্ষ রোপণ করে একটি বিশাল কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। তার এই কর্মকাণ্ড দেখাশুনা করার জন্য প্রতিদিন ৩০/৩৫ জন লোক কাজ করছে। ১৫ লাখ টাকা নিয়ে মৎস্য চাষ ও হ্যাচারি পরিচালনা করে এখন তিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মানিকের এই সফল কর্মকাণ্ড দেখার জন্য একটি সূত্রমতে, ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুর এলে তিনি হেলিকপ্টার থেকে দূরবীন দিয়ে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীর উপর খাঁচায় মাছ চাষ প্রকল্প দেখেন। পরে তিনি সার্কিট হাউজে স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও মত্স্য বিজ্ঞানীদের থেকে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।

 

এ বিষয়ে তিনি চাঁদপুরকে মডেল ধরে সারা দেশের নদ-নদী, প্লাবন ভূমি ও অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি চালু করার জন্য প্রত্যেক জেলা প্রশাসক ও মত্স্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি প্রস্তাবিত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে ১১৩ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জেলা মত্স্য কর্মকর্তা রতন দত্ত জানান।



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...