গাংনীর ষোলটাকায় পাঙ্গাস মাছ চাষের নীরব বিপ্লব : স্বাবলম্বী করেছে বেকার যুবকদের

মহাসিন আলী/মানিক: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা গ্রামবাসী পাঙ্গাস মাছ চাষে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। পাঙ্গাস চাষ অত্যধিক লাভজনক হওয়ায় গ্রামের বেকার যুবকরা বাড়ির আশপাশের হাজামজা পুকুর অথবা পতিত জমিতে পুকুর কেটে চাষ শুরু করেছে। পাঙ্গাস চাষকে কেন্দ্র করে গ্রামটিতে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক ফিসফিডিং মিল। পাঙ্গাস চাষের অভাবনীয় সফলতায় আর্থিকভাবে সচ্ছলতার পাশাপাশি বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে গ্রামের মানুষ। এই গ্রামের মানুষ মেহেরপুর জেলার মৎস্যচাষীদের কাছে এখন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। সবার কাছে এখন ষোলটাকা পাঙ্গাসের গ্রাম নামে পরিচিত।

 

মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার ষোলটাকা গ্রাম। আজ থেকে ৩ বছর আগে সম্পদ থেকেও অভাব আর বেকারত্ব যে গ্রামের মানুষদের কুরে কুরে খেতো, আজ সেই গ্রামের ৫শ পরিবারের ৪ হাজার মানুষ অন্ন সংস্থানের জন্য আর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না একে অন্যের। গ্রামের সকলেই এখন কর্মব্যস্ত নিজেকে নিয়েই। এর সবকিছুই সম্ভব হয়েছে পাঙ্গাস মাছ চাষের কারণে। মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত প্রসিদ্ধ স্থান হিসেবে এ ষোলটাকা গ্রামটি পরিচিতি পেয়ে গেছে। যারা মাছচাষী নয়, তারাও কর্মব্যস্ত। অন্যের পুকুরে মাছ পরিচর্যা করে ও মাছের ফড়িয়া হিসেবে অর্থ উপার্জন করছে।

 

মাছের খাবারের জন্য ইতোমধ্যে গ্রামটিতে শতাধিক ফিসফিডিং মিল গড়ে উঠেছে। সেখানে বেশ কয়েকশ লোক নিয়োজিত।

 

যশোর থেকে ধানী পোনা এনে বিশেষ ব্যবস্থায় বড় করে পুকুরে ছাড়া হয়। বছরে দু’থেকে তিনবার এক একটি পুকুরে এ পোনা ছাড়া যায়। আর খাবারের উপকরণ আমদানি হয় কুষ্টিয়ার খাজানগর থেকে। এ উপকরণ দিয়ে নিজেদের মিলেই পাঙ্গাসের খাবার তৈরি করে চাষিরা। বছর তিনেক আগে গ্রামের বাবুল ও অস্তাইন নামে দু’জন যশোর থেকে ৩ হাজার পাঙ্গাসের পোনা নিয়ে এসে মাত্র ১৫ কাঠা আয়তনের পুকুরে ছাড়ে। ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে ১ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করে। পাঙ্গাস চাষের এ অভাবনীয় সাফল্য দেখে গ্রামের আরো ১০ জন মাছচাষী পাঙ্গাস চাষ শুরু করে। তাদের সফলতা গ্রামের মানুষদের আরো অনুপ্রাণিত করে। এরপর শুরু হয় প্রতিটি পরিবারে পাঙ্গাস চাষ। মাত্র দু’বছরের ব্যবধানে গ্রামে গড়ে ওঠে ২ হাজারেরও বেশি পুকুর। যার প্রতিটি পুকুরে এখন পাঙ্গাস মাছের চাষ হচ্ছে। গ্রামের এমন কোনো পরিবার নেই যাদের পাঙ্গাস চাষ নেই।

 

 এক বিঘা জমির জলাকারে ৩ হাজার পোনা ছাড়া যায়। ৪-৫ মাসের ব্যবধানে প্রতিটি মাছের ওজন হয় এক কেজি করে। বর্তমান বাজার দরে ৮০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করলে পাওয়া যায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লাভ থাকে।

 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, গ্রামটিতে পাঙ্গাস চাষে এমন বিপ্লব ঘটেছে, যা দেশের অন্য কোথাও নেই। চাষীরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেন ও খাবার প্রস্তুত ও করণীয় সম্পর্কে জেনে নেন। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষিত ও বেকার যুবকদের মাছচাষে আগ্রহী করে তোলা হয়েছে। গ্রামটিতে দেখা গেছে নারী-পুরুষ সবাই ব্যস্ত। বেকারত্বের অভিশাপ কাউকে গ্রাস করে না। পাঙ্গাস চাষই যেনো বদলে দিয়েছে গ্রামটির চিত্র।



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...