ছাগলের খামার - স্বাবলম্বী খোকনের গল্প

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের দক্ষিণ জলিরপাড়ের দিনমজুর খোকন বাকচী কয়েক বছর আগে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে জীবন নির্বাহ করতো। কোনোদিন কাজ পেত, কোনোদিন কাজ না পেলে তার পরিবার পরিজন নিয়ে উপোষ করতে হতো। দিনমজুর করতে গেলেও তাকে গরু বা ছাগলের ঘাস কাটতে হতো, এ থেকেই তার মনে একটি খামার করার ইচ্ছা হয়।

 

২০০৭ সালের দিকে অনেক ধার দেনা করে ১৪ হাজার ৫০০ টাকা গুছিয়ে ১৪টি কালো ছাগল কিনে নিজের প্রচেষ্টায় পালন শুরু করে। বর্তমানে তার খামারে ছাগলের সংখ্যা ৬০টি। এছাড়াও এ কয়েক বছরে ১০ লাখ টাকার ছাগল বিক্রি করেছেন। এখন যে ৬০টি ছাগল তার খামারে রয়েছে তার প্রায় ৩০/৩৫ টি দুই তিন মাসের মধ্যে বাচ্চা দেবে, তখন তার ছাগলের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২০০টির মতো। যার বাজার মূল্য হবে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা।

 

খোকন জানায়, খামার তৈরির প্রচেষ্টা নিজেরই ছিল। অনেক সংস্থা তাকে ঋণ দিতে চাইলেও তিনি নেননি এবং ভবিষ্যতেও নেয়ার ইচ্ছা নেই। তিনি আরো জানান, এ কয়েক বছরের যে বড় ধরনের সাফল্য যখন এসেছে বিধায় এখন ঋণের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু প্রাণিসমপদ বিভাগের চিকিৎসা সেবা। মুকসুদপুর উপজেলা সদর থেকে তার খামারের দূরত্ব বেশি হওয়ায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার জন্য ঠিকমতো যোগাযোগ রাখতে পারছেন না প্রাণিসম্পদ বিভাগের সঙ্গে। স্থানীয় পশু চিকিৎসকের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা করান, তাছাড়া ছাগলের রোগ ব্যাধিও কম হয়। খোকন বা তার স্ত্রীর যদি ছাগলের রোগ ব্যাধি নিরাময়ের উচ্চ ধরনের প্রশিক্ষণ থাকত তাহলে তিনি বেশি উপকৃত হতেন।

 

খোকন কিছু ছাগল বিক্রি করে একটি গরুর খামার দিয়েছে। খোকনের ইচ্ছা একটি ট্রলার বা ইঞ্জিন চালিত নৌকা তৈরি করবেন। যাতে করে ছাগলগুলো বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে খাবার খাইয়ে আনতে পারেন। আগামীতে কিছু ছাগল বিক্রি করে কয়েকটি বাছুর কিনে মোটাতাজা করবেন বলে জানান। খোকনের খামারে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন তার মা ও স্ত্রী। খোকন আরো জানায় অনেক এনজিও তাকে টাকা ঋণ নিতে বলে, সে তা প্রত্যাখ্যান করে বলে এরা কাবুলিয়ালার মতো ঋণ দেয়ার পরেই টাকা নেয়ার জন্য ওতপেতে থাকে। এ ব্যাপারে মুকসুদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনিরুল ইসলাম জানান কেউ যদি বিনা ঋণে খামার করতে পারে তাহলে ঋণ ফেরত দেয়ার চিন্তা থাকে না। চিকিৎসা বা প্রশিক্ষণ বিষয়ে আমরা খোকনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। 




HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...