দেশী আঙ্গুর - টক নয়, মিষ্টি

দেশীয় আঙ্গুর ফল টক নয়, মিষ্টি। দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিপর্যায়ে বিক্ষিপ্তভাবে একেবারে ছোট পরিসরে আঙ্গুর আবাদ হয় ঠিকই, কিন্তু তা টক। যার জন্য আঙ্গুর আবাদ ও উৎপাদন বানিজ্যিকভাবে শুরু হয়নি দেশে। আঙ্গুর চাহিদা পূরন করতে হয় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে আমদানিকৃত আঙ্গুর দিয়ে। কিন্ত এখন দেশে বানিজ্যিকভাবে মিষ্টি আঙ্গুর আবাদ ও উৎপাদনের বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

 

যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষনা কেন্দের কৃষিবিদ ডঃ নাজিরুল ইসলাম দীর্ঘ পরিশ্রম করে কৃত্রিম হরমোন বেবহার করে নতুন পদ্ধতিতে মিষ্টি আঙ্গু

র বিরাট সাফল্য আনতে সক্ষম হয়েছে। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন ছাটাই এবং জিব্রালীন নামক  হরমোন ব্যবহার করে আঙ্গুর মিষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। ছাটাই করনের মাধ্যমে গাছ ফল  ধরার সময় নিয়ন্ত্রন করা হয়। যাতে আঙ্গুরের বৃদ্ধিকালীন সময়ে আবহাওয়া শুষ্ক ও উজ্জল সুর্য আরো বিদ্যমান থাকে।

 

অল্পজমিতে পরীক্ষামুলক আঙ্গুরের সচরাচর জাত লাগিয়ে মিষ্টি আঙ্গুর উৎপাদন করে সম্ভব হয়েছে। মাএ এক মাসের মধ্যে আঙ্গুর খাবার উপযোগী হয়। উপযুক্ত পরির্চযার মাধ্যমেই আঙ্গুর মিষ্টি করা যায়। তবে অনেক জাত এমনিতেই মিষ্টি তাছাড়া গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথেই আঙ্গুরের মিষ্টি ও স্বাদসহ গুনগত মান বৃদ্বির পায়। তিনি জানান উদ্বাবিত প্রযুক্তি ও পদ্বতি কাজে লাগিয়ে দেশের সবখানেই বানিজ্যিকভাবে আঙ্গুর আবাদ ও উৎপাদন করা সম্ভব। তা আজ লাগিয়ে তারা বেশ সফল ও লাভবান হয়েছে।

 

তিনি আরো বলেন এশিয়ার অনেক দেশ যেমন মালয়েশিয়া, থাইল্যান্, ভিয়েতনাম ও ফিলিপিনসহ ঊঞ্চ আবহাওয়ামন্ডল এলাকায় এই প্রক্রিয়ায় বানিজ্যিক ভাবে আঙ্গুর উৎপাদন সম্পকে তিনি বলেন হাতেকলমে পরীক্ষা করে দেখা গেছে সুস্বাদু ও খাবার উপযোগী আঙ্গুরের ফলন বৃদ্বিতে প্রচুর পরিমানে হরমোন কীটনাশক এবং সার প্রয়োগ করতে হয়। জিব্রালিন ফলে প্রয়োগ করতে পাতায় উৎপন্ন শর্করা জাতীয় খাদ্য সঞ্চালন বৃদ্বি করে। আর আমাদের নয়া প্রযুক্তিতে কীটনাশক প্রয়োগ নেই বললেই চলে শুস্ক আবহাওয়ায় সাধারনত রোগ বালাই হয় না। তাছারা উজ্জ্বল আলোতে ফটোসিনথেসিজের (সালোকে সংশ্লেষণ) মাত্রাও বৃদ্বি পায়। আর শীতের মৌসুমে কুয়াশা ও স্বল্প দিবসের  কারণে ফটোসিনথেসিজ আপানাআপনি কমে যায়, ফলে প্রয়োজনীয় শর্করা সঞ্চালিত হয় না। এসব ক্ষেএে পরীক্ষা করে দেখা গেছে আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে আঙ্গুর আবাদের সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত। আঙ্গুর (মাচা) বা টেলিফোন লাইনের মত বাওনি দিয়ে চাষ করা যায়। শিম ও লাউয়ের মতো মাচায় চাষ করলে বেশীর ভাগ আঙ্গুরের ফলন ভালো হয়।

 

ঐ পদ্ধতিতে আশেপাশের অপ্রয়োজনীয় ডালপালা কেটে ছেটে মূল ডগায় সহজে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। আর টেলিফোন ও বিদ্যুৎ লাইনের মতো করে লাগানো গাছে এমনিতেই আঙ্গুর ফলে আলো বাতাস পায়।আবার বেশী ফল ঝলসে যায়। তাতে ফলের গুনগত মান কমে যায়। তাই পাতা রাখার ব্যবস্থা থাকতে হয়। আঙ্গুর আবাদ ও উৎপাদন নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি উদ্ভাবন কারী ডাক্তার নাজিরুল ইসলাম মাএ দেড় বছর এসেছেন যশোর কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটে।

 

এর আগে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ফিলিপাইন লস বানোস থেকে উদ্যান ফসলের উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।শিক্ষাগ্রহনকালে তিনি সে দেশের আঙ্গুর উৎপাদন পদ্ধতি ও কলাকৌশল স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ।তার উপর অধ্যায়ন করে তিনি কর্মজীবনে অভিজ্ঞতার জ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি বাস্তবে কাজে লাগিয়ে সফলতা অর্জন করেছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সফল হয়ে খুবই খুশী।তবে তিনি জানান, আরো বেশী হবো তখনই যখন সারা বাংলাদেশে বানিজ্যকভাবে আঙ্গুর আবাদ ও উৎপাদনে সফলতা অর্জন করবে।

 

বাংলাদেশে আঙ্গুর সম্পূর্নটাই আমদানি করা হয়।আমদানি নির্ভর হলেও আঙ্গুর বাংলাদেশ খুবই জনপ্রিয় ফল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত আকারে চাষ হলেও তা টক স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিটিউট নব্বই দশকের শেষ দিকে দেশ বিদেশে থেকে  আঙ্গুরের জাত এনে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও মিষ্টি স্বাদেও আঙ্গুর ফলানো সম্ভব হয়নি। যশোরের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র উদ্যানতত্ত্ব গবেষনাকেন্দ্র ও কৃষিবিজ্ঞানীগণ গবেষণার মাধ্যমে টক আঙ্গুর গাছ থেকে মিষ্টি ও সুস্বাদু আঙ্গুর ফলাতে সক্ষম হয়েছে।

 

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,১৩০০ শতাব্দীতে পার্শিয়ানরা ভারতীয় উপ-মহাদেশে আঙ্গুর চাষ প্রবর্তন করেন,যা পরবর্তিতে ভারতের দক্ষিনাঞ্চলে বিস্তার লাভ করে।ভারতের দক্ষিনাঞ্চলের উঞ্চ আবহাওয়ায় আঙ্গুর হলেও এতদিন বাংলাদেশ আঙ্গুর চাষে সফল হতে পারেনি।আঙ্গুর বিভিন্ন প্রকারের মাটি ও আবহাওয়া জন্মাতে পারে।উদ্ভাবিত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে আঙ্গুর আবাদ ও উৎপাদন করা সম্ভব দেশের সবখানেই।এতে আঙ্গুর আমদানিতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ যে বৈদেশিক মূদ্রা ব্যয় হয়,তা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। একইসাথে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।আঙ্গুর সরাসরি ভক্ষণ করা ছাড়াও এর থেকে রস ও কিসমিস তৈরী করা যায়।        



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...