পরাগায়ন - নতুন পদ্ধতিতে

সাধারনত মৌমাছি, পাখি ও কীটপতঙ্গে সবজি ফুলের ডিম্বায়নে পরাগায়ন ঘটিয়ে থাকে। কিন্তু এখন চাষীরা নিজেরাই ‘পুরুষ ফুলে’র রেণু ‘মেয়ে ফুলে’র ডিম্বাষয়ে ছোয়াচ্ছে, ঘটছে পরাগায়ন। এতে সবজির কোন ফুলে ফল ধরা বাদ পড়ে না। সচরাচর বিঘা প্রতি যে উৎপাদন হয় নতুন এই পদ্ধতি ব্যবহারে অনেকক্ষেত্রে দিগুন উৎপাদন হচ্ছে। পরীক্ষামূলক ভাবে যশোরের কুঠুরাকান্দি গ্রামে ওই পদ্ধতি ব্যবহার হলেও বর্তমানে দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের মাঠে মাঠে সবজির আবাদ ও উৎপাদন নতুন এক বিপ্লব সাধিত হয়েছে।

 

এর আগে সবজি উৎপাদনের রেকর্ড এই অঞ্চলটিতে ফেরোমন ট্রাপ মাধ্যেমে কীটনাশক ছাড়াই সবজির পোকা মারার পদ্ধতি ব্যবহার করে সবজি চাষীরা সফলতা অর্জন করেছে। পানির মধ্য শিম আবাদ ও উৎপাদন করে ও রেকর্ড সৃষ্টি করেছে এ অঞ্চলের সবজি চাষীরা। পরাগায়ন হচ্ছে আরেক বিপ্লব। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা বলেছেন, মূলত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক অতিমাত্রায় ব্যবহারের ফলে সবজির ফুলে পরাগায়ন ঘটাতে সাহায্যকারী মৌমাছি, পাখি ও কীটপতঙ্গের ক্ষতি হয়েছে।

 

সেজন্য পরাগায়ন ঘটানোর ক্ষেত্রে মারাত্নক সমস্যার সৃষ্টি হয়। অভিজ্ঞ কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা আবিষ্কার করেন পরাগায়ন ঘটানোর পদ্ধতি। বর্তমানে এই পদ্ধতিতে আবাদ ও উৎপাদন করে সবজি চাষীরা বিরাট লাভবান হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, পুরো অঞ্চলের মাঠে মাঠে এখন চাষীরা সকাল থেকে পটল, কাকরোল, লাউ ও কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি ফুলে পরাগায়ন ঘটাচ্ছে।

 

যশোরের কুঠুরাকান্দি গ্রামের চাষীরা জানান, ফল জাতীয় সবজিতে পুরুষ ফুলের রেণু ও মেয়ে ফুলের রেণু আলাদা। সকাল ৭ টা থেকে ১১ টার মধ্য সবজির ফুলে পরাগায়ন ঘটানো হয়। বিশেষ করে মহিলা কৃষি শ্রমিকরা এ কাজটি করে থাকে বেশী। চাষী পর্যায়ে এই পদ্ধতি চালু হলেও ব্যাপক ভাবে এর প্রচলনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এখনো কোন ব্যবস্থা নেয় নি। তবে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষন কর্মসূচীর একটা পরিকল্পনা আছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছেন।

 

সবজি চাষীরা জানান, পরাগায়ন ঘটানোর পদ্ধতি চালুর আগে দেখা যেত সবজির ফুল সময় মতো আসলেও তার একটা অংশ ঝরে যেত, কোন ফল ধরত না তাতে। অর্থ ও সময় ব্যয় করে অনেক কষ্টে আবাদ করার পর দেখা যেত সবজির উৎপাদন আশানুরূপ হত না। সেজন্য মাঠে মাঠে নতুন পদ্ধতি ব্যবহারের আগ্রহ বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর জন্য কাউকে কোন প্রশিক্ষন দিতে হচ্ছেনা। একবার পরখ করে যে কেউ দেখলে সহজেই ব্যবহার করা যায়।

 

 যশোরের খাজুরা এলাকার মাঠে কর্মরত মহিলা অর্চনা রানী বললেন, সকালে শিশির ভেজা সবজির ফুল দেখে স্পষ্ট বুঝা যায় যে কোনটি ‘পুরুষ ফুল; আর কোনটি ‘মেয়ে ফুল’। তা দেখে পুরুষ ফুলের রেণু যাতে কোনফুল আসে না। ওই ফুলটি ছিড়ে মেয়ে ফুলের ডিম্বাসয়ে ছোঁয়াতে হয়। তাতে কোন ফুল ফল বাদ পড়ে না। মাঠে মাঠে ফুলে ফুলে রেণু ছোঁয়ানুর দৃশ্য দেখার জন্য অনেক উৎসুক লোকজন প্রথম দিকে ছুটে আসতো। আস্তে আস্তে গোটা এলাকায় প্রচার হয়ে পড়ে নতুন পদ্ধতিতে সবজির আবাদ। অনেক সবজি চাষী একটু কষ্ট হলেও পদ্ধতি ব্যবহার করছে বেশ জোরেশোরে। তাতে ফলন ও ভালো হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের একজন কৃষি কর্মকর্তা জানান, জরুরীভাবে সবজির ফুলের পরাগায়ন পদ্ধতি ব্যবহারের মাত্রা বৃদ্ধি ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তাতে সবজি আবাদ ও উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। 



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...