নেপিয়ার ঘাস - ফরিদপুরে চাষে আগ্রহ বাড়ছে

নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ফরিদপুরের কৃষকরা। ক্ষেতে একবার বীজ রোপণ করলে পরবর্তী ৪/৫ বছর পর্যন্ত আর বীজ বুনতে হয় না। দেড়মাসেই নেপিয়ার ঘাস প্রায় ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা হয়ে বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। দেড়মাস পরপর ক্ষেত থেকে ঘাস কেটে বাজারে বিক্রি করা সম্ভব। সামান্য সার প্রয়োগ, শ্রম এবং পরিচর্যা ছাড়া এ ঘাস আবাদ করতে কোন বেগ পেতে হয় না। বীজও সহজে সংগ্রহ করা যায়। অন্যান্য ফসল ফলিয়ে কম লাভ হওয়ায় এবং গোখাদ্য হিসেবে এ ঘাসের চাহিদা থাকায় অনেক কৃষকই এখন এ ঘাস আবাদ করছেন। 


উল্লেখ্য, ধানের খড় ও বিচালির দাম অনেক বেশি। বিচালির চেয়ে সবুজ ঘাসে পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় গবাদিপশুর স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং দুধও বেশি হয়। এ কারণে গবাদিপশু পালনকারী এবং খামারিরা গো-খাদ্য হিসেবে নেপিয়ার ঘাসকেই বেছে নিচ্ছে। ফলে ঘাস চাষ করে লাভের মুখ দেখছে ফরিদপুরের কৃষকরা। পশু সম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, অনেকটা আখগাছের মত দেখতে নেপিয়ার ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল, গোখাদ্য হিসেবে পুষ্টিকর, সহজপাচ্য ও খরা সহিষ্ণু। সারাবছরই এ ঘাসের উত্পাদন অব্যাহত থাকে। তবে শীতকালে এর উত্পাদন একটু কম হয়।



২০০৯ সালে ৩ হাজার টাকার বীজ সংগ্রহ করে বাড়ির পাশের জমিতে এই ঘাস চাষ করেন ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা গ্রামের চাষী আ. রব শেখ। সার, প্রয়োজনীয় সেচ ও পরিচর্যায় মাত্র দেড়মাসে তার ক্ষেত ঘাসে ভরে ওঠে। প্রায় ৪ ফুট লম্বা নেপিয়াস ঘাস বিক্রি শুরু করেন তিনি। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বর্তমানে তিনি ৩ একর জমিতে এ ঘাসের চাষ করছেন। খরচ বাদে প্রতিমাসে তিনি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন।

জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. হাসানুজ্জামান বলেন, ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে এ ঘাসের আবাদ শুরু হয়। আবাদী-অনাবাদী জমিসহ রাস্তার ধারেও এ ঘাসের আবাদ হচ্ছে। ফরিদপুরে স্থায়ী, মৌসুমী, বিচ্ছিন্ন এবং স্থায়ী পদ্ধতিতে মোট ৭৫ একর ৬২ শতাংশ জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস আবাদ হচ্ছে।

 

নেপিয়ার ঘাস - চাষে দিনবদল ৫ গ্রামের মানুষের

 

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার পাঁচটি গ্রামকে বলা হয় ঘাসগ্রাম। এসব গ্রামের মানুষ ঘাস চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। স্থানীয় বাজারে ঘাসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবং অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায় বলে উপজেলার দিঘলকান্দি, পৌর সদর, বাড়ইপাড়া, চকিবাড়িসহ হিন্দুকান্দি গ্রামের মানুষ অন্য পেশা ছেড়ে ঘাস চাষের প্রতি ঝুঁকছেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। গোখাদ্যের অভাব পূরণের পাশাপাশি অনেকে নেপিয়ার ঘাস চাষ করে সংসারের স্বচ্ছলতা এনেছেন। খামারিদের গোখাদ্যের চাহিদার কথা চিন্তা করে নেপিয়ার ঘাস চাষ শুরু হয়। এরপর অনেক ক্ষুদ্র চাষী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ শুরু করে বাজারে বিক্রি করে আসছেন।

 

উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে প্রথম সারিয়াকান্দিতে ঘাস চাষে উৎসাহী করতে বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে উন্নত জাতের নেপিয়ার ঘাসের চারা বিতরণ করা হয়। তখন থেকেই চাষীরা উন্নত জাতের নেপিয়ার ঘাস চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বর্তমানে উপজেলায় ১৭০ হেক্টর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ হচ্ছে।

 

দিঘলকান্দি গ্রামের কামাল উদ্দিন জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন। এক মাস পরপর ঘাস কাটা যায়। সারা বছর তিনি ঘাস বিক্রি করেন। খরচ বাদ দিয়ে নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করে বছরে ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ হয়।

 

সারিয়াকান্দি পৌর সদরের কুঠিবাড়ীর গাভী পালনকারী হাসেন আলী ও সারিয়াকান্দি বাজারের ভজন পোদ্দার জানান, নেপিয়ার জাতের ঘাস দিয়েই গাভীর কাঁচাঘাসের অভাব পূরণ করতে হচ্ছে। উপজেলার কমপক্ষে ৫-৬টি গ্রামের ১৮ হাজার মানুষ এ ঘাস চাষ করছেন।

তারা জানান, ঘাস চাষ লাভবান হওয়ায় এখন অনেকে অন্য পেশা ছেড়ে এ কাজ শুরু করেছেন। এতে স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে শুরু করেছে অনেকে।

 

ঘাসগুলো জমি থেকে কাটার পর আঁটি করে ২০ থেকে ৩০ টাকায় (পরিমাণের ওপর) বিক্রি করা হয়। স্থানীয় কৃষি বিভাগ নেপিয়ার ঘাস চাষে সহযোগিতা করে থাকে চাষীদের।

ওয়ার্ল্ড ভিশন সারিয়াকান্দির প্রোগ্রাম অফিসার সিবাস্টিন বিশ্বাস জানান, ২০০০ সালের কিছু আগে ওয়ার্ল্ড ভিশন সারিকান্দি থেকে নিম্নআয়ের মানুষকে এ ঘাস চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

  

কাজী রফিকুল হাসান, জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ॥

 

জামালপুর জেলার কৃষকরা গোখাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য নেপিয়ার ঘাস চাষ শুরু করেছে। নেপিয়ার ঘাস চাষ এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে যা বিগত সময়ে হয়নি। নেপিয়ার ঘাষ চাষ বৃদ্ধির পেছনে স্থানীয় কৃষি বিভাগের বিরাট অবদান রয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগে পরামর্শে কৃষকরা নেপিয়ার ঘাস চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। যার জন্যে কৃষকরা নেপিয়ার ঘাষ চাষে ঝুঁকে পড়েছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রথম বারের মত নেপিয়ার ঘাস চাষ শুরু হয়েছে। ফলে কৃষি শিল্পে নবজাগরন সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার সোলাকুড়ি, শ্রীপুর, বাঁশচড়া, জামিরা, ভালুকা ছাড়াও লক্ষীরচর, রায়েরচর, চর যথার্থপুর ও সাহেবের চর এলাকায় নেপিয়ার ঘাস চাষ হচ্ছে। এ ঘাষ চাষ সম্পর্কে কৃষকরা জানান, এই ঘাস গরু মোটাতাজাকরনে সহায়তা করে। এই ঘাসে রয়েছে শুস্ক পদার্থ ২৫০ গ্রাম, জৈব পদার্থ ২৪০ গ্রাম, প্রোটিন ২৫ গ্রাম ও ২০ গ্রাম মেগাজুল বিপাকীয় শক্তি রয়েছে। বছরে যে কোন সময়ে এ ঘাস চাষ করা যায়। বাজারে নেপিয়ার ঘাসের ব্যাপক চাহিদা। শহরের গো-খামারীরা এই ঘাস ক্রয় করে থাকেন। নেপিয়ার ঘাস চাষ জামালপুর সদর উপজেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী  উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ সব উপজেলাধীন ডাংধরা, পারারামপুর, হাতীবান্দা, বাগারচর, বাট্টাজোড়, চিকাজানী, চর আমখাওয়া, পাথরশি, ছাড়াও মহাদান, ভাটারা, কামরাবাদ, পোগলদিঘা, সাতপোয়া, ডোয়াইল ও আগুনা এলাকায় নেপিয়ার ঘাস চাষে বিপ্লব শুরু হয়েছে।

এ সব অঞ্চলের কৃষকরা জানান, এবারই প্রথম নেপিয়ার ঘাস চাষ শুরু করেছি। প্রথম কর্তন করে বাজারে বিক্রি করে ১০/১২ হাজার টাকা আয় হয়েছে। আরো বিক্রি করা যাবে। নেপিয়ার ঘাস কৃষকদের স্বাবলম্বী করেছে। জামালপুরে কৃষকরা নেপিয়ার ঘাস চাষ শুরু করেছে ॥ কৃষি শিল্পে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।

 

চাষ করুন নেপিয়ার ঘাস

   

 

এখন বর্ষা মৌসুম। এ সময় দেশের নিম্নভূমিগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। এসব অঞ্চলের গরু-মহিষের জন্য ঘাস তো দূরে কথা, কয়েক মুঠো খড় জোটানোও কঠিন। এ সময় অভাবের তাড়নায় অনেকে গরু-মহিষ কম দামে বিক্রি করে দেয়। অনেকের গরু, মহিষ, ছাগল-ভেড়া খাদ্যাভাবে শুকিয়ে যায়।

বর্ষা মৌসুমে বাড়ির পাশের জমিতে ধান উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পতিত জমিতে পানি ও আগাছা বেশি হয়ে থাকে। এসব জমিতে গাছের ছায়া পড়ে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। তাই এরকম লাখ লাখ একর পতিত জমি সারাবছরই খালি পড়ে থাকে। একটু সচেতন হলেই মানুষ এ জমিগুলো কাজে লাগিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করতে পারে। বর্ষা মৌসুমসহ সারাবছরই এ জমিগুলোতে নেপিয়ার জাতীয় ঘাস চাষ করে গো-সম্পদের প্রসার ঘটাতে পারে। নেপিয়ার ঘাস ভিটামিনসমৃদ্ধ ও পরিত্যক্ত জায়গায় ভালো জন্মে। লম্বায় ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত হয়। দুই সপ্তাহ অন্তর ঘাস কাটা যায়। নেপিয়ার ঘাস চাষ খুব সহজ, চাষের ব্যয়ও কম। গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া এ ঘাস খুব পছন্দ করে। তাই এরা সহজেই বেড়ে ওঠে। এ ঘাস চাষ করে দেশে পশুসম্পদের ব্যাপক উন্নতি ঘটানো সম্ভব। মানুষ পশুপালন করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে। বিদেশে গোসম্পদ ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...