পাঙ্গাস চাষ - বদলে গেছে কুষ্টিয়ার দুটি গ্রামের চিত্র

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা: কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়ে ও কিশোরীনগর পাঙ্গাস গ্রাম হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। আর পাঙ্গাস চাষের মাধ্যমে বদলে গেছে গ্রামের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা। বর্তমানে দুটি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪শ' পুকুরে পাঙ্গাস চাষ হচ্ছে। কেউ ৮-১০টি পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে পাঙ্গাস চাষ করছে। আদাবাড়ে গ্রামে পাঙ্গাস চাষে পথিকৃত হচ্ছেন আদাবাড়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ।

 

কুষ্টিয়া শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের এ গ্রামে ১৯৯৫ সালে প্রথম পুকুরে পাঙ্গাস চাষ শুরু করেন আব্দুল হামিদ চেয়ারম্যান। তিনি জানান, প্রথমে থাইল্যান্ড থেকে আনা পোনা দিয়ে একটি পুকুরে চাষ শুরু করেন। আগে পদ্মা, যমুনা, মেঘনা প্রভৃতি বড় বড় নদীতে পাঙ্গাস পাওয়া যেত। এখন নদীতে খুবই কম মিলে। পুকুরে পাঙ্গাস চাষ অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। তার সাফল্য দেখে গ্রামের অন্যরাও চাষে এগিয়ে আসে। বর্তমানে তাদের গ্রামে ৩শ'র বেশি পুকুরে চাষ হচ্ছে। পাঙ্গাস চাষ করে গ্রামের অন্তত ৩শ পরিবারের ভাগ্য বদল হয়েছে।

 

তারা জানান, তিনি ১০টি পুকুরে পাঙ্গাস চাষ করছেন। খরচ বাদে তার এ বছর লাখ পাঁচেক টাকা লাভ থাকবে। গ্রামের চাষি একরামুল হক জানান, তিনি ৯ বছর ধরে পুকুরে পাঙ্গাস চাষ করছেন। এখন ৮টি পুকুরে চাষ করেন। এ বছর মোট ১১ লাখ টাকা পাঙ্গাস বিক্রি করে খরচ বাদে ৪ লাখ টাকা নিট লাভ হয়েছে। সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি ১০ বছর ধরে পুকুরে পাঙ্গাস চাষ করছেন। বর্তমানে তার পুকুরের সংখ্যা ১০টি। এবার খরচ বাদে তার ৫ লাখ টাকা নিট লাভ হয়েছে। ক্ষুদ্র চাষী সুলতান আহমেদ মাত্র ১৫ কাঠা আয়তনের একটি পুকুরের পাঙ্গাস বিক্রি করে দু লাখ ৭৫ লাখ টাকা আয় করেন। চাষে এক লাখ টাকা ব্যয় হয়। তার এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। চলতি বছর মৎস্য সপ্তাহে পা্ঙ্গাশ চাষের সাফল্যের জন্য কুষ্টিয়া জেলা থেকে পুরস্কার পেয়েছেন।

 

আদাবাড়ে গ্রামের দেখাদেখি পাশের কিশোরীনগর গ্রামেও দু'বছর আগে পুকুরে পাঙ্গাস চাষ শুরু হয়েছে। পাঙ্গাস চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উৎপাদিত মাছ বিক্রিতে কোন সমস্যা হয় না। মাছের ব্যাপারিরা খামারে এসে মাছ কিনে নিয়ে যায়। আধা কেজি সাইজের মাছ প্রতি কেজি এখন ৬৫- ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে এক দেড় কেজি সাইজের মাছ একশ' টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে। পাঙ্গাস চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যশোর থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হয়। স্থানীয়ভাবে পোনা তৈরির হ্যাচারি হলে তাদের সুবিধা হত। আদাবাড়ে ও কিশোরীনগর গ্রামে বর্তমানে বছরে ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ' টন পাঙ্গাস উৎপাদন হচ্ছে।

 

যার মূল্য সাড়ে ৫ কোটি টাকা হবে। পাঙ্গাস ছাড়াও সামান্য পরিমাণে রুই কাতলার চাষ হয়ে থাকে। সরজমিনে গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, পুকুরগুলোতে পাঙ্গাস কিলবিল করছে। খাবার ছিটিয়ে দিলে ঝাঁক বেঁধে ভেসে ওঠে। পুকুর পাড়ে আমের বাগান তৈরি হয়েছে। এতে ফলের উৎপাদনও বাড়ছে। চাষিরা জানান, তাদের গ্রামে এ পাঙ্গাস বিপ্লবে সরকারি কোন সহযোগিতা নেই। পাঙ্গাসের চাহিদা ভারতে ব্যাপক বলে জানা গেছে। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি কেজি ২ ডলার মূল্যে ভারতে পাঙ্গাস রপ্তানি হচ্ছে।



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...