পাটপণ্য - যাচ্ছে জাপান ও ইতালিতে

দেয়ানা গ্রামের ছিন্নমূল নারীদের তৈরি পাটজাত পণ্য এখন জাপান, কোরিয়া ও ইউরোপের বাজার দখল করেছে। একসময় যেসব ছিন্নমূল নারী প্রতিদিনের খাবারের চিন্তায় সময় কাটাতেন, আজ তাঁরাই দক্ষ শ্রমিক। তাঁদের হাতে তৈরি পাটজাত পণ্যের চাহিদা ইউরোপের বাজারে দিন দিন বেড়ে চলেছে। আগামী দুই মাসে তাঁরা যেসব পণ্য তৈরি করবেন, তাও বিক্রি হয়ে গেছে।

 

পাট ব্যবসায়ী মাহফুজুল হকের বাড়ি দেয়ানা গ্রামে গড়ে উঠেছে পাটজাত পণ্য তৈরির কারখানা। নাম ইশানা জুট প্রোডাক্ট লিমিটেড। এই কারখানায় ছিন্নমূল নারীরা পাট দিয়ে নানান ধরনের পণ্য তৈরি করছেন। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারোপযোগী ব্যাগ ও নারীদের ব্যবহার করা ব্যাগ। পাটের তৈরি এই ব্যাগ যাচ্ছে জাপান, কোরিয়া ও ইতালিতে।

 

প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম প্রথমে ঢাকায় শুরু হয়েছিল। পরে এটি স্থানান্তরিত হয় দেয়ানা গ্রামে। কারখানা সম্পর্কে উদ্যোক্তা মাহফুজুল হক বলেন, 'রাজধানীতে মানুষের চাপ বেশি। সে জন্য অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি জায়গায় ছিন্নমূল নারীদের কাজের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছে।' দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনে যায়। শুরুতে নারীদের প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিভাবে পণ্য তৈরি করা হবে তার কলাকৌশল হাতে-কলমে শিখিয়ে তাঁদের দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়।

 

এখানে কাজ করেন ৭০ জনের মতো ছিন্নমূল নারী। সুপারভাইজার, প্রশাসনসহ সব মিলে এখানে ১০০ কর্মী কাজ করেন। নারী কর্মীরা জানান, আগে তাঁদের খুব অভাব ছিল। এখন তাঁদের নিয়মিত কাজ আছে। প্রতিদিন ছয়-সাত ঘণ্টা কাজ করতে হয়। যেহেতু সবার বাড়ি কারখানার কাছেই, সে কারণে ঘরের কাজে কোনো সমস্যা হয় না। দক্ষতাভেদে একজন নারীকর্মী প্রতি মাসে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা আয় করেন। এখানকার তৈরি সব পণ্যই বিদেশে যায়। তাতে মালিকের যেমন আয় হয়, তাঁদেরও হয়।

 

ইশানা জুট প্রোডাক্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহফুজুল হক বলেন, 'বিদেশে পাটপণ্যের চাহিদা অনেক বেড়েছে। পরিবেশ সচেতনতার কারণে বিদেশিরা প্লাস্টিকের তৈরি দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহার করছেন না। এ কারণে পাটের তৈরি ব্যাগের চাহিদা অনেক।' তিনি আরো বলেন, 'পাটজাত পণ্যসামগ্রী প্রধানত ভারত থেকেই রপ্তানি হয়। বলতে গেলে ভারত পাটপণ্যের বাজার দখল করে রেখেছে। আমরা সহজেই ভারতীয় রপ্তানিকারকদের সাথে এই পণ্যের প্রতিযোগিতা করে ইউরোপের বাজার দখলে নিতে পারি।' এ জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

কারখানাটির এখনো নিজস্ব কোনো বিপণন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ক্রেতার চাহিদা ও পছন্দের ভিত্তিতে পণ্য তৈরি করে দেওয়া হয়। কারখানার শ্রমিকরা এখন জাপানে সরবরাহের জন্য ব্যাগ তৈরি করছেন।

 

খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী আমিনুল হক এই ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, 'খুলনা আগে ছিল পাটকলের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকে পাট ও পাটজাত পণ্যসামগ্রী রপ্তানির ইতিহাস অনেক পুরনো। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য এমন ধরনের নতুন নতুন পণ্য খুঁজে বের করতে হবে।' খুলনায় পাটজাত পণ্যের এই কারখানা এ অঞ্চলে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উদ্যোক্তাকে চেম্বারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...