শিম - পানির মধ্যে চাষের চমক

পানির মধ্যে শিম চাষ। রীতিমতো চমক সৃষ্টি করা এক নয়া পদ্ধতি। সাধারন উঁচু জমিতেই শিম সহ শাক-সবজি আবাদের কথা সবাই জানেন। কিন্তু কৃষি কাজের শিকড় খুঁজে ফেরা চাষীদের পানির মধ্যে শিম আবাদ করে বিরাট বিপ্লব ঘটাতে পারে- একথা অনেকেই জানে না। নিচু ও ডুবা এলাকা যা একটু বৃষ্টিতে পানি বদ্ধতার সৃষ্টি হয় পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়, ফসলাদি হয় না বলে গ্রামে গ্রামে বহু জমি ফেলে রাখা হয়। কিন্তু সেসব জমিতেও যে সবজি চাষে রেকর্ড সৃষ্টি করা যায়, তার অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি গ্রামের চাষীরা। নয়া পদ্ধতিতে ফলন হচ্ছে বাম্পার। লাভ হচ্ছে দশ গুন বেশী। বছরের পর বছর পড়ে থাকা জমি থেকে এখন প্রতিনিয়ত চাষীরা শিম নয়, যেন টাকা টেনে তুলছে। মাঠ সাংবাদিকতা করতে এ গ্রাম সে গ্রাম ঘুরতে গিয়ে নজর পড়ল যশোর-চৌগাছা সড়কে সিংহঝুলি গ্রামের সবুজ সৌন্দর্য মেলে ধরা একটি সবজির মাঠের দিকে। সাথে ছিল ফটো সাংবাদিক। একে একে নতুন পদ্ধতিতে পানির মধ্যে শিম চাষের সব কথা জানা গেল, বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হল। মাঠে নেমে দেখা গেল, পানি থৈ থৈ করছে। নানা জাতের মাছ খেলে বেড়াচ্ছে। পানির মধ্যে মাচা করে চাষ হচ্ছে শিম। নীচু মাছ আর উপরে শিম। অনেকের কাছে আশ্চর্য মনে হবে। কিন্তু বাস্তবে সিংহঝুলি গ্রামের চাষী হাফিজুর রহমান পরীক্ষামূলকভাবে তার পানি বদ্ধ জমিতে নিচে মাছ আর উপরে শিম আবাদ করে সফল হয়। প্রচার হয়ে পড়ল তা এলাকায়। তার অনুকরন করে গোটা এলাকার যেসব অনাবাদী ও পানিবদ্ধ যেসব জমি আছে, সেসব জমিতে নয়া পদ্ধতিতে মাছ শিম চাষ করার হিড়িক লাগে। মাএ ২/৩ বছরের মধ্যে এখন ঐ পদ্ধতিতে মাঠের পর মাঠ শিমসহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ হচ্ছে অনেক বেশী। ফলে চাষীরা লাভবান হচ্ছে।

 

নয়া পদ্ধতি সম্পর্কে সবজি চাষীরা জানান,পানিবদ্ধ জমির কয়েক স্থানে মাটির ঢিবি করা যায়। বাকি জমিতে পানির উপর তৈরী করা হয় মাচা। মাটির ঢিবিতে শিমসহ বিভিন্ন সবজির শিকড় পুঁতে দেয়া হয়। সেখান থেকে মাচাভর্তি হয় সবজি। মূলত শিম চাষ করেই চাষীরা বেশী সাফল্য আনতে সক্ষম হয়েছে। আবার একেবারে পানিতে থাকা শিকড়েও শাক সবজি উৎপাদনে পরীক্ষা চলছে। চাষী হাফিজুর রহমানের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন সিংহঝুলি আব্দুল গনি, হারুনুর রশিদ, আব্দুস  ফজলুর রহমান, আব্বাস উদ্দীন, আব্দুল আজী অলীউর রহমান ও তৌহিদুজ্জামানসহ অনেক কৃষক। সিং, ঝুলি ছাড়াও মাজালি, জগন্নাথপুর ও জামতলাসহ আশপাশের গ্রামগুলোর নিচু এলাকার পরিতেক্ত জমি ও ডুবাতে শিম চাষ চলছে পুরোদমে। নিম্নাঞ্চলের জমিতে ওই এলাকার কৃষকরা এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ১২/১২ মন ধান উৎপাদন করে ৪ হাজার টাকা আয় করতেন। নয়া পদ্ধতিতে শিম চাষ করে এখন ওই একই জমি প্রতি বিঘায় ৩০ মন শিম ফলন হচ্ছে। আয় হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা, অরথ্যাথ ১০ গুণ বেশী। একই সাথে তারা ঐ পানিবদ্ধ জমিতে মাছ চাষ করেও বেশ লাভবান হচ্ছে। ঐ এলাকার মাঠের পর মাঠ মাছ ও শিম একসাথে চাষ করার দৃশ্যে যে কারো নজরে পড়বে। সবজি উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করা যশোরের অনেক চাষী যারা এতদিন উচু জমিতে সবজি আবাদ করতেন, তারা এই নয়া পদ্ধতিতে ও প্রযুক্তির যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে নিজেদের এলাকায় একই ভাবে আবাদের দিকে ঝুকছেন। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারাও অনেকে অবাক হয়েছেন। সিংহঝুলি গ্রামে নয়া পদ্ধতির সবজি আবাদের রেকর্ড দেখে। গত ২ বছর অল্প এলাকায় আবাদ হলেও এবার অনেক বেশী জমিতে ওই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। একজন কৃষি কর্মকর্তা জানান এবারের ভয়াবহ বর্ষনে সবজির অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। নয়া পদ্ধতিতে শাক সবজি আবাদের জন্য পরে থাকা জমি বের করা হচ্ছে। ফলন বেশী হবার কারন হিসেবে একজন কৃষিবিদ জানান, পানির উপর মাচা করে সবজি আবাদ করলে রসের অভাব হয়না মোটেও তা ছাড়া নিচুর মাটি তুলে ঢিবি করায় সারি মাটি বের হয়, এতে সবজি দ্রুত বাড়ে।

 

দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের দশ জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক পানির মধ্যে শিম চাষ সম্পর্কে বলেন, সিংহঝুলি গ্রামের মতো বাংলাদেশ অন্য কোথাও এই পদ্ধতিতে ব্যাপক আকারে সবজি আবাদ এখনো চালু হয়নি। শিম আবাদ উৎপাদনের ক্ষেতে এটাই প্রথম।



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...