পেয়ারা - পাবনায় অসময়ে চাষে সাফল্য

পরিশ্রম যে মানুষকে সাফল্যের শিখরে পৌছে দেয় সেটাই প্রমান করেছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন। অসময়ে আগাম জাতের থাই পেয়ারা চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়ে আধুনিক কৃষিতে অনুকরনীয় দৃষ্টানত্ম স্থাপন করেছে এই কৃষক। পেয়ারা চাষে এলাকায় হয়ে উঠেছেন অন্যান্য কৃষকদেরদের অনুপ্রেরনার প্রতীক। তার সাফল্য তাকে এনে দিয়েছে পেয়ারা আমজাদ নামের পরিচিতি।

 

জানা যায়, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন। পরিশ্রম করার মানসিকতা ছাড়া শুরুতে আমজাদের তেমন কিছুই ছিলনা। দৃঢ় ইচ্ছাকে পুজি করে পৈত্তিক সুত্রে পাওয়া ৮ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কৃষি উৎপাদন শুরু করে ২০০৩ সালে। তার ইচ্ছাকে শক্তিতে রুপান্তরিত করে নিজেকে কৃষি কাজে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন মাত্র অষ্টম শ্রেণী পাশ করা আমজাদ। ক্রমান্বয়ে ৮ বিঘার সেই জমিতে গড়ে তোলেন আখি-মনি কৃষি খামার। ৮ বিঘা জমি থেকে তিনি এখন ২৮ বিঘা জমির মালিক। আরো ৪০ বিঘা জমি নিয়েছেন চুক্তি ভিক্তিক লিজ। যে খামারে বর্তমানে জমির পরিমান ৬৮ বিঘায় রুপ নিয়েছে। তার খামারে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন কৃষি শ্রমিক কাজ করে।

 

তিন বছর আগে ১৫ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ শুরু করে। অসময়ে আগাম জাতের থাই পেয়ারা চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন আমজাদ। মাত্র কয়েক বছরের ব্যাবধানে আমজাদের সংসারে সচ্ছলতা এনে দিয়েছে এই কৃষিকাজ। শুধু তাই নয় এলাকায় পেয়েছেন পেয়ারা আমজাদের খেতাব। তার পেয়ারার বাগান থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ মন পেয়ারা বিক্রি করছেন তিনি। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এ বছর তিনি খরচ বাদে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা আয় করবেন বলে জানান।

 

কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া প্রযুক্তির লগসই ব্যবহার করেছেন স্বল্প শিক্ষিত এই কৃষক। খামারে সংযোজন করেছেন আধুনিক চাষ পদ্ধতি। খামারে জমি বহুফসলী করার পাশাপাশি গ্রহণ করেছেন সাথী ফসল চাষের ফর্মূলা। বর্তমানে তার কৃষি খামারে চাষ হয় ফল, সবজি ও মসলা জাত ফসল। তন্মধ্যে ১৫ বিঘা জমিতে আগাম জাতের পেয়ারা অন্যতম। এছাড়াও অন্যান্য সবজি ও মসলাজাত ফসল চাষে তার বাৎসরিক আয় দাড়াবে প্রায় ৩০ লাখ টাকায়। শুধু তাই নয় তার গোহাল ঘরে রয়েছে ৩টি শংকর জাতের গাভী ও ১৫ ছাগল। এছাড়াও কৃষিতে নব বিপ্লবের কৃষক আমজাদ হোসেনের কৃষি উপকরণের সংগ্রহশালাও বেশ সমৃদ্ধ। রয়েছে ৭ ইউনিট বিশিষ্ট নিজস্ব সেচ যন্ত্র, পাওয়ার টিলার ও ট্রলির মতো গাড়ি, কৃষি উপকরণের পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণের সম্ভার।

 

এ ব্যাপারে গ্রামবাসী অধ্যাপক আকরাম হোসেন বলেন, নিজ চেষ্টায় আমজাদ হোসেন যে কৃষি খামার প্রতিষ্ঠা করেছে অবশ্যই সে দেশ ও দশের জন্য একটি মহৎ কাজ করেছে। তবে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পায়নি স্বীকৃতি কিংবা ব্যাংক ঋণ সুবিধা। শুধুমাত্র নিজ অর্থ ব্যয়ে বিশাল আকারের এই খামার পরিচালনায় হিমশিম খেতে হয় কৃষি বিপ্লবী আমজাদ হোসেনকে। তার পরেও সে থেমে থাকেনি। সরকার যদি আমজাদের মতো প্রান্তিক কৃষকদের সহায়তায় এগিয়ে আসে তবে কৃষিতে আরো সাফল্য হবে। দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করবে বলে স্থানীয় কৃষকদের ধারনা।

 

ঈশ্বরদীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম হোসেন বলেন, শুধু কৃষক আমজাদ হোসেনই নয়, যখন যে কৃষক আমাদের পরামর্শ চায় আমরা নিজ উদ্যোগে পরিশ্রমী কৃষকদের পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করে থাকি। ফলে তারা উন্নতি লাভ করে।

 

ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, কঠোর পরিশ্রম একনিষ্ঠ আত্মপ্রত্যয় কৃষক আমজাদকে দিয়েছে ঐশ্বর্য আর কৃষিতে উচ্চ খ্যাতি। পেয়ারা চাষে এলাকায় হয়ে উঠেছেন অন্যদের অনুপ্রেরনার প্রতীক।

 

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সমপ্রসারন কমকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, কৃষি উৎপাদনে সাফল্য পাওয়া কৃষক আমজাদের খামারে আমি গিয়েছি। সে একজন সফল প্ররিশ্রমী কৃষক, মূলত অসময়ে আগাম জাতের পেয়ারা চাষে তাকে এনে দিয়েছে অনাবাদ্য সাফল্য। সে বর্তমানে পেয়ারার ভাল বাজার মুল্য পাওয়ায় তার ভাগ্য খুলে গেছে। তবে বর্তমানে অনেকেই এ ধরনের চাষের প্রতি উৎসাহিত হচ্ছে।



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...