ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ, একক প্রজাতি হিসাবে সর্ববৃহৎ এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য সম্পদ। দেশের মৎস্য উৎপাদনে একক ভাবে ইলিশের অবদান প্রায় শতকরা ১২ ভাগ। জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় শতকরা ১ ভাগ। কর্মসংস্থানেও ইলিশ মাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের ৪০টি জেলার প্রায় ৪.৫ লক্ষ জেলে ইলিশ মাছ আহরণ করে থাকে। ইলিশ মাছে রয়েছে অসম্পৃক্ত ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা মানুষের দেহের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এ মাছ একদিকে যেমন এদেশের মানুষের অতি প্রিয় খাদ্য অন্যদিকে তেমনি আর্টিসেনাল জেলেদের আয়ের প্রধান উৎস। ইলিশ মাছ আহরণে নিয়োজিত জাল, যন্ত্র, জেলেদের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেলেও একক প্রচেষ্টায় আহরণ মাত্রা (CPUE) বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। পরিবেশগত নানাবিধ কারণসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদী হতে কোটি কোটি ইলিশ পোনা বা জাটকা ধরার ফলে ইলিশ মাছের প্রাকৃতিক মজুদ প্রক্রিয়া (Natural recruitment) ভীষণভাবে ব্যহত হচ্ছিল। তাই এ সম্পদের সঠিক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে এ মাছের জীববিদ্যা বিশেষ করে খাদ্য ও খাদ্যাভাস, পরিপক্কতার বয়স, বৃদ্ধির হার, ডিম ধারণ ক্ষমতা, প্রজনন কাল, বয়স নির্ণয়, কৃত্রিম প্রজননের সম্ভাব্যতা যাচাই সর্বোপরি তার জীবন ধারা সম্পর্কে জানার লক্ষ্যকে সামনে রেখে অন্যান্য গবেষণার পাশাপাশি ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্স্টিটিউট, নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের গবেষণা পুকুরে ইলিশ মাছের চাষ করা হয়। যার পদ্ধতি ও ফলাফল এই প্রবন্ধে বর্ণনা করা হলো।
গবেষণা পদ্ধতিঃ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্স্টিটিউট, নদী কেন্দ্র, চাঁদপুরের ২টি গবেষণা পুকুরে মার্চ ১৯৮৮ থেকে ফেব্রুয়ারী ১৯৮৯ পর্যন্ত মোট ১২ মাসব্যাপী “পুকুরে ইলিশ মাছের চাষ” বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা/পর্যবেক্ষণ করা হয় । প্রতিটি পুকুরের আয়তন ছিল ০.১৫ হেক্টর। ইলিশ পোনা তথা জাটকা ছাড়ার পূর্বে পুকুরগুলি পাম্প ব্যবহার করে সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে ফেলা হয়। শুকনা পুকুরের তলদেশে হেক্টর প্রতি ১,০০০ কেজি গুড়াচুন ছিটিয়ে দেয়া হয়। প্রায় ৩ মিটার পরিমাণ গভীরতা পর্যন্ত পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ পানি দ্বারা পূর্ণ করা হয়। ১নং ও ২নং পুকুরে পর্যায়ক্রমে গোবর ও টিএসপি সার ৩,০০০ কেজি/হেঃ/১০দিন এবং ৩০ কেজি/হেঃ/১০ দিন হারে প্রয়োগ করা হয়। অতঃপর পুকুরের পানির গভীরতা, স্বচ্ছতা, তাপমাত্রা, pH, দ্রবীভূত অক্সিজেন এবং উম্মুক্ত কার্বনডাই অক্সাইড এর মাসিক তথ্য রেকর্ড করা হয়।
ইলিশ পোনা (জাটকা) সংগ্রহ, পরিবহন ও পুকুরে অবমুক্তকরণঃ ইলিশ পোনা চাঁদপুরের নিকটবর্তী মেঘনা নদী থেকে বেড় জালের (Seine net) সাহায্যে সংগ্রহের পর ১০০ লি. ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ষ্টীল ও প্লাটিকের ড্রামে করে Speed বোট যোগে তীরে এনে রিক্সা ও পিকআপ যোগে গবেষণা পুকুরে মজুদ করা হয়। ড্রামে অ্যারেটর দ্বারা অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। নদী থেকে সংগ্রহের পর পুকুরে ছাড়া পর্যšত্ম সময় লেগেছিল ১/২ থেকে ২ ঘন্টা। নদীর পানি ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা সব সময় পর্যবেক্ষণ করে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ করে রাখা হয়েছিল। হেক্টর প্রতি ২৫০০ হারে উভয় পুকুরে ইলিশ পোনা ছাড়া হয়েছিল। অতিদ্রুততা ও সাবধানতার পরও পরিবহনের সময় প্রায় ৬০% পোনা মারা গিয়েছিল। উল্লেখ্য যে, ইলিশ পোনা অত্যন্ত আলো সংবেদনশীল, আলোর সংস্পর্শে এলে এরা সহজেই মারা যায়।