পুকুরেই মাছের সাথে মুক্তা চাষ

মুক্তা মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ।ঝিনুকের ন্যাকার গ্রন্থি হতে নির্গত রস জমে যে পদার্থ তৈরি হয় তা হচ্ছে মুক্তা।দেশের বিলে-ঝিলে ও উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর ঝিনুক রয়েছে। ওই ঝিনুক ব্যবহার করে মুক্তা চাষ ও উৎপাদন বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে।কিন্তু সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর নূন্যতম কোন উদ্যোগ নেই। সরকার একটু দৃষ্টি দিলেই পরিকল্পিতভাবে মুক্তা চাষ ও উৎপাদন করে প্রতিবছর দেশীয় চাহিদা পূরন করা ছাড়াও হাজার হাজার কোটি টাকা মুক্তা রফতানি করা সম্ভব।এতে বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

 

এক্ষেত্রে চীনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়ে সম্পতি চীন সফর শেষে মৎস্য অধিদপ্তরের একটি বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছে চীনে মাছ চাষের পাশাপাশি ব্যাপক আকারে মুক্তা চাষ করে তারা আর্থিকভাবে বিরাট লাভবান হচ্ছে।প্রাকৃতিক এ সম্পদের চাষ ও উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ সবদিক দিয়ে খুবই উপযোগী। দেশে মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মুক্তা চাষের একটি প্রকল্পও আছে।কিন্তু কখনোই প্রকল্পটির কার্যক্রম জোরদারের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

 

 দেশের কয়েকটি স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে একেবারেই স্বল্প পরিসরে বলা যায় পরীক্ষামূলকভাবে মুক্তা চাষ হয়। মুক্তা চাষের জন্য বাড়তি খরচও যে খুব বেশী তা নয়,দরকার শুধু উদ্যোগের। যা বছরের পর বছর ধরে অনুপস্থিত রয়েছে। সূএ মতে, দেশের সবখানেই পুকুরের অগভীর পানিতেও আমাদের দেশীয় ঝিনুকে মুক্তা চাষ করে যাবে। স্বাদু কিংবা লোনা পানির পার্থক্য করতে হয় না, পরিষ্কার পানি হলেই হবে।

 

 মৎস্য অধিদপ্তর ও মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট এর সূত্রে জানা গাছে দক্ষ জনবলের অভাব ও প্রযুক্তিগত সম্যক ধ্যান ধারণার অভাবে বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে কয়েকটি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে মুক্তা চাষ করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। চাষী পর্যায়ে ব্যাপকতা লাভ করা মোটেও সম্ভব হয়নি। অথচ এ ধরণের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে মুক্তা উৎপাদনে বিপ্লব ঘটানোর সুযোগ রয়েছে।

 

চীন ও থাইল্যান্ডে অভ্যন্তরীণ মাছ চাষের ওপর প্রশিক্ষন ও সরেনজমিনে অভিজ্ঞতা অর্জন করা কৃষিবিদ মোঃ অলিয়ুর রহমান জানালেন, চীনে আমাদের মতো নদ নদী ও পুকুরের অগভীর পানিতে ব্যাপকভাবে মুক্তা চাষ করে সংশ্লিষ্ট চাষীরা স্বাবলম্বী হয়েছে।সেখানাকার প্রতিটি এলাকায়  মাছ চাষের পাশাপাশি মুক্তা চাষ হচ্ছে। তার অভিজ্ঞতা বর্ননা করে আরো জানালেন পরিক্ক ও পূর্নাঙ্গ রত্ন মুক্তা তৈরী হতে সাধারনত ৩ বছর সময় লাগে। কিন্ত সাধারণ মুক্তা তৈরীতে সময় লাগে মাএ বছরখানেক। মাছের সাথে পানিতে মুক্তা চাষ করে প্রায় একই সময়ে মাছ ও মুক্তা উৎপাদন করে সম্ভব হয়েছে চীনে,এর জন্য চাষ প্রায় একই সময়ে মাছ ও মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে চীনে।

 

এর জন্য খুব বেশী অর্থ প্রয়োজন হয়নি। তিনি জানান, ঝিনুকের মধ্যে একটি বিশেষ উপাদান থাকে যাকে ন্যাকার বলে।ঝিনুকের শেল এর মেন্টেলের মসৃন পর্দাকে নেক্রিয়ার লেয়ার বলা হয়,সেখানে নির্গত রস জমেই তৈরী হয় মুক্তা।এক বিঘা পুকুরের পানিতে বাংলাদেশে সাধারণত ২ হাজার ঝিনুক মুক্তা চাষের পরামর্শ দেয়া হয়।সেখানে চীনে এক বিঘা পুকুরে ২৮ হাজার ঝিনুকে মুক্তা চাষ করা হচ্ছে।

 

নিয়ম সম্পর্কে সূত্রে জানায়,পুকুর শুকিয়ে বিঘা প্রতি ৬০ কেজি চুন ও পরবর্তীতে ৫/৬শ কেজি গোবর দিয়ে পুকুরে পানি ভরে দিতে হয়।তাতে মাছ ছেড়ে ও পানির মধ্যে ঝুলিয়ে দিতে হয়।ঐ পানিতে মাছ ও মুক্তা চাষ একসাথে চলতে থাকে।এতে পরিশ্রম এক, কিন্ত ফল দুই।তবে পানিতে ডুবিয়ে দেয়ার আগে প্রতিটি ঝিনুককে অপারেশন করে খোলশ বা শেল ফাঁক করে তাতে ভেতরে নেক্তায়াস স্তরে বালিকনা কিংবা গোশতের ক্ষুদ্র কনা ঢুকিয়ে দিতে হয়। চীনে প্রতি বিঘার পুকুরে বছরে কমপক্ষে ৭৫ হাজার টাকার মুক্তা ও ২০/২৫ হাজার টাকার মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে।

 

বাংলাদেশে একই পদ্ধতিতে মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগন অভিমত ব্যাক্ত করেছেন।সূত্র মতে,সেই হিসাবে দাখা যায় মুক্ত চাষ মাছ চাষের চায়েও অনেক বেশী লাভ হয়। আর সবচেয়ে সুবিদাজনক হচ্ছে মাছ চাষের পাশাপাশি একই সময়ে মুক্তা চাষ করার সুযোগ রয়েছে।মুক্তা চাষ করতে গিয়ে মাছ চাষের জন্য নূন্যতম কোন অসুবিধা হবে না।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানায়,বাংলাদেশে যে জাতের ঝিনুক আছে তাতে সাধারণত গোলাপী রং এর মুক্তা চাষ করা যাবে এবং সারা বিশ্বে গোলাপী মুক্তার চাহিদা ব্যাপক।বাংলাদেশের কক্যবাজার মহেশখালী ও সেন্টিমার্টিন এলাকাকে অতীতে পার্ল বা মুক্তার বিছানার বলা হতো ওইসব এলাকা চাষের ঝিনুকে ভরপুর রয়েছে এখনো।দেশের সবখানের পুকুর ছাড়াও ওইসব সহ উপকূলীয় এলাকায় ঝিনুকের মাঝে মুক্তা চাষের উদ্যেগ নেয়া যেতে পারে সরকারিভাবে।

 

তবে শুধু উদ্যেগ নিলেই হবে না, যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে মুক্তা চাষ ও উতপাদনে।সেই জন্য বিদেশী বিশেষজ্ঞ এনে মুক্তা চাষীদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্তা করতে হবে, উদ্ধুদ্ধ করতে হবে মতস্যচাষীদের।সংশ্লিশট বিশেষজ্ঞগনের অভিমত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যদি দেশে পরিকল্পিত ভাবে মুক্তা চাষ ও উৎপাদনের ব্যবস্তা করা যায় তাহলে দেশ বিরাট লাভ বান হবে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য নতুন এক দিগন্ত উন্মেয়াচিত হবে।সংশ্লিষ্টরাও অথনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠার সুযোগ পাবে।



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...