নরসিংদীর শিবপুরবাসী এখন মাছ নিয়ে স্বপ্ন দেখছে |
পাল্টে গেছে নরসিংদীর শিবপুরের টিলা এলাকার অর্থনীতির চিত্র, বিশেষ করে বর্ষাকালের চিরচেনা রূপে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এসেছে আলাদা গতিময়তা। নেপথ্য কারণ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষ। স্থানীয় কৃষকরা টিলার ঢালু প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থানের বাড়তি ক্ষেত্র। পাশাপাশি বাড়ছে ফসলের ফলন। কেননা মাছ চাষে জমির উর্বরা শক্তি বাড়ছে। এতগুলো ইতিবাচক দিক বিবেচনায় প্রতিবছরই বাড়ছে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষের চৌহদ্দি। মৎস্য চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিবপুর উপজেলার বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে রয়েছে লাল মাটির টিলা। টিলার ঢালু জমিতে যুগের পর যুগ আবাদ হয়ে আসছে বিভিন্ন ফসল। কিন্তু প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে টিলার ঢালু জমি প্লাবিত হয়। ফলে তখন ওই সব জমি থেকে যেত অনাবাদি। ওই সময়টাকে কাজে লাগানোর চিন্তা থেকেই মাছ চাষের বিষয়টি স্থানীয়দের ভাবনায় আসে।
দীর্ঘ ১০ বছর আগের কথা। স্থানীয় চক্রধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধা কৃষকদের সংগঠিত করে চান্দারটেকের ৬০ বিঘা আয়তনের জলাবদ্ধ জমিতে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষের উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে স্থানীয় কৃষকদের অংশগ্রহণে সমিতি গঠন করে অর্থ সংগ্রহ করে চারপাশে বাঁধ দিয়ে শুরু হয় মাছ চাষ। প্রথম বছরেই আসে অভাবনীয় সাফল্য। তা দেখে অনুপ্রাণিত হয় অন্য গ্রামের মানুষ। এগিয়ে আসে সরকার। স্থানীয় প্রশাসন থেকে পাড় বাঁধা, মাটি ভরাট ও কালভার্ট তৈরি করে দেওয়া হয়। এরই মাধ্যমে কয়েক বছরে পাল্টে যায় টিলা এলাকার বর্ষাকালের চিরচেনা রূপ। বর্তমানে শিবপুরে এমন ১৫০টি সমিতির প্রায় পাঁচ হাজার সদস্য রয়েছেন।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলার চক্রধা, জয়নগর ও দুলালপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫৬৩ হেক্টর(563 HECTER) প্লাবন ভূমিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ হয়েছে। এ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের এক হাজার ২৭৫ টন মাছ উৎপাদিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, লাল মাটির টিলার ঢালু জমিগুলোয় বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখা হয়েছে। মাছ চাষ শেষে পানি অপসারণের জন্য বাঁধের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে কালভার্ট। সব মৎস্য খামারই মাছে ভরপুর। আবাদি মাছগুলোকে খাদ্য দেওয়ার দৃশ্যটাও নয়নাভিরাম। মাছ চাষিরা খাবারের পাত্র দিয়ে শব্দ করতেই বিশাল খামারে মাছগুলো পানিতে টুক করে শব্দ করে। এরপর দল বেঁধে ছুটে আসে শব্দের দিকে। খাবার দিতেই অজস্র মাছে একাকার হয়ে যায় স্থানটি।
চক্রধা ঠোঁটপাড়া মৎস্য খামারের বাদল মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বর্ষাকালে পানিতে ভইর্যা যাওয়ায় এই ক্ষেতে খালি বোরো ধান করা যায়। আমরা ক্ষেতে হগলতে (সবাই) মিইল্যা পাড় বাইধ্যা মাছ চাষ করছি। এতে প্রত্যেক বছরই আনগর ভালা লাভ হয়। আবার মাছ চাষ করণের লাইগ্যা জমিতে সার কম লাগে, ফসল ভালা হয়।'
প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষের ফলে একসময় বর্ষায় বেকার থাকা স্থানীয় মানুষগুলোর কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে। মৌসুমি মৎস্য চাষি বেলায়েত হোসেন বলেন, 'বর্ষা সিজনে আমাদের কোনো কাজকর্ম নাই। এহন গ্রামে প্রজেক্ট করছে। এই প্রজেক্টের মধ্যে আমরা কাজকর্ম কইরা যা প্রত্যেক দিন তিনশ (300) থেকে চারশ (400) টাকা মজুরি পাইতাছি। এতে আনগর দিন চইল্যা যাচ্ছে।'
কৃষকের কাছ থেকে প্লাবন ভূমি ইজারা নিয়ে চক্রধা ইউনিয়নের রাঙামাটিয়া গ্রামের তিন বন্ধু আনোয়ার পারভেজ, সোহেল মিয়া ও তাজুল ইসলাম গড়ে তুলেছেন রাঙামাটি মৎস্য খামার। কয়েক মাসের পরিচর্যায় ইতিমধ্যে খামারের মাছ বড় হয়ে উঠেছে।
আনোয়ার পারভেজ বলেন, 'আমরা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ৩০ বিঘা (30 Bigha) জমি লিজ নিয়ে রুই, কাতলা, কৈ, সিলভার কার্প, ফ্রিগেট, পাঙ্গাশ সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেছি। মাছের খাবারসহ আনুষঙ্গিক খাতে প্রায় ২৫ লাখ (25 Lakhs) টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি এবার ৪০ লাখ (4 Million) টাকা মূল্যের মাছ বিক্রি করতে পারব।'
চক্রধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধা বলেন, 'আমার ইউনিয়নসহ অন্য ইউনিয়নগুলোর প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ দ্রুতই সম্প্রসারিত হচ্ছে। এতে বর্ষায় অব্যবহৃত টিলার ঢালু পানিতে মাছ চাষ করে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সরকার যদি এদিকে আরেকটু সুদৃষ্টি দেয় এবং বাঁধ তৈরি করতে সহযোগিতা করে, তাহলে শিবপুরের বিশাল এলাকার প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষের মাধ্যমে দেশের মাছের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করা সম্ভব হবে।'
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাজমহল বেগম বলেন, 'পলি পড়ে দেশের অনেক ছোট নদীনালা ভরাট হয়ে গেছে। উন্মুক্ত জলাশয়েও মাছের উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে মাছের চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান ও ফসলের উৎপাদন বেড়েছে।' তিনি জানান, প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ সম্প্রসারণের জন্য একটি পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হবে।
সুমন বর্মণ, শিবপুর (নরসিংদী) থেকে ফিরে পাল্টে গেছে নরসিংদীর শিবপুরের টিলা এলাকার অর্থনীতির চিত্র, বিশেষ করে বর্ষাকালের চিরচেনা রূপে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এসেছে আলাদা গতিময়তা। নেপথ্য কারণ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষ। স্থানীয় কৃষকরা টিলার ঢালু প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থানের বাড়তি ক্ষেত্র। পাশাপাশি বাড়ছে ফসলের ফলন। কেননা মাছ চাষে জমির উর্বরা শক্তি বাড়ছে। এতগুলো ইতিবাচক দিক বিবেচনায় প্রতি বছরই বাড়ছে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষের চৌহদ্দি। মৎস্যচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিবপুর উপজেলার বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে রয়েছে লাল মাটির টিলা। টিলার ঢালু জমিতে যুগের পর যুগ আবাদ হয়ে আসছে বিভিন্ন ফসল। কিন্তু প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে টিলার ঢালু জমি প্লাবিত হয়। ফলে তখন ওই সব জমি থেকে যেত অনাবাদি। ওই সময়টাকে কাজে লাগানোর চিন্তা থেকেই মাছ চাষের বিষয়টি স্থানীয়দের ভাবনায় আসে।
দীর্ঘ ১০ বছর আগের কথা। স্থানীয় চক্রধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধা কৃষকদের সংগঠিত করে চান্দারটেকের ৬০ বিঘা আয়তনের জলাবদ্ধ জমিতে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষের উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে স্থানীয় কৃষকদের অংশগ্রহণে সমিতি গঠন করে অর্থ সংগ্রহ করে চারপাশে বাঁধ দিয়ে শুরু হয় মাছ চাষ। প্রথম বছরেই আসে অভাবনীয় সাফল্য। তা দেখে অনুপ্রাণিত হয় অন্য গ্রামের মানুষ। এগিয়ে আসে সরকার। স্থানীয় প্রশাসন থেকে পাড় বাঁধা, মাটি ভরাট ও কালভার্ট তৈরি করে দেওয়া হয়। এরই মাধ্যমে কয়েক বছরে পাল্টে যায় টিলা এলাকার বর্ষাকালের চিরচেনা রূপ। বর্তমানে শিবপুরে এমন ১৫০টি সমিতির প্রায় পাঁচ হাজার সদস্য রয়েছেন।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলার চক্রধা, জয়নগর ও দুলালপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫৬৩ হেক্টর প্লাবন ভূমিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ হয়েছে। এ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের এক হাজার ২৭৫ টন মাছ উৎপাদিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, লাল মাটির টিলার ঢালু জমিগুলোয় বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখা হয়েছে। মাছ চাষ শেষে পানি অপসারণের জন্য বাঁধের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে কালভার্ট। সব মৎস্য খামারই মাছে ভরপুর। আবাদি মাছগুলোকে খাদ্য দেওয়ার দৃশ্যটাও নয়নাভিরাম। মাছচাষিরা খাবারের পাত্র দিয়ে শব্দ করতেই বিশাল খামারে মাছগুলো পানিতে টুক করে শব্দ করে। এরপর দল বেঁধে ছুটে আসে শব্দের দিকে। খাবার দিতেই অজস্র মাছে একাকার হয়ে যায় স্থানটি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাজমহল বেগম বলেন, 'পলি পড়ে দেশের অনেক ছোট নদীনালা ভরাট হয়ে গেছে। উন্মুক্ত জলাশয়েও মাছের উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে মাছের চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান ও ফসলের উৎপাদন বেড়েছে।' তিনি জানান, প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ সম্প্রসারণের জন্য একটি পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হবে।