মধু চাষ - মৌবাক্সে মধু চাষ
বাজারমূল্য এক কোটি টাকা

অধিক মুনাফা ও কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে সহায়ক হওয়ায় মাগুরায় সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলি জমি ও ফলের বাগানে মৌবাক্সের মাধ্যমে মধু চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমান সরিষা মৌসুমে জেলার অর্ধশতাধিক ক্ষেতে বসেছে এ ধরনের মৌবাক্স। যার মাধ্যমে এবার ৫০ থেকে ৬০ টন মধু সংগৃহীত হবে বলে মৌচাষিরা আশা করছেন। সংগৃহীত এ মধুর মূল্য দাঁড়াবে এক কোটি টাকার উপর। জেলার সদর উপজেলার টিলা, কেচুয়াডুবি, ইছাখাদা, মিঠাপুর, রাঘবদাইড়, মালঞ্চি, আলমখালী, মহম্মদপুরের বিনোদপুর, ওমেদপুর, ঘুলিল্লাসহ কমপক্ষে ২০টি গ্রামে বর্তমানে চলছে এ ধরনের মৌবাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহের কাজ। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখা গেছে, কখনো সরিষাক্ষেতের চারদিকে, কখনো ক্ষেত থেকে একটু দূরে পাঁচ-ছয়জনের এক একটি দল বসিয়েছে মধু সংগ্রহের জন্য কাঠ দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের বাক্স। এই বাক্সে থাকা রানি মৌমাছির মাধ্যমেই বিভিন্ন সরিষাক্ষেতে আসা পুরুষ মৌমাছিদের সেখানে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। বাক্সের নিচের দিকে থাকা ছিদ্র দিয়ে অসংখ্য পুরুষ মৌমাছি সরিষা ক্ষেতের মধু নিয়ে ভেতরে ঢুকছে। পরে সেখানে থাকা কৃত্রিম মৌচাকে তারা সংগৃহীত মধু জমা করছে। এই জমাকৃত মধুই পরবর্তী সময়ে মৌচাষিরা তাদের নিজস্ব যন্ত্রে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে বিক্রি করছে।

 

সদরের মিঠাপুর গ্রামের মৌচাষি রজব আলী জানান, ১০ বছর ধরে তিনি এ প্রক্রিয়ায় মৌচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমানে তিনটি সরিষাক্ষেতে তিনি মৌচাষ করছেন। যেখান থেকে উৎপাদিত হবে তিন লাখ টাকার মধু। তিনি জানান, শুধু সরিষাক্ষেত নয়_ধনিয়া, আম বাগান, লিচু বাগান ও তিলক্ষেতে তিনি একইভাবে এ ধরনের মৌচাষ করে থাকেন। মৌচাষের জন্য প্রয়োজনীয় বাঙ্গুলো নিজেরা তৈরি করেন। এ ছাড়া এই চাষ করতে প্রয়োজন হয় রানি মোমাছি ও সামান্য কিছু উপকরণ। যেটি খুব একটা ব্যয়সাপেক্ষ নয়। পক্ষান্তরে খরচের তুলনায় লাভ দ্বিগুণের বেশি। সে কারণে দিনকে দিন এই মৌচাষ বাড়ছে।


সদর উপজেলার ইছাখাদার মৌচাষি মাওলানা মোখলেছুর রহমান জানান, মধুর ওষুধি গুণ থাকায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এর একটি ব্যাপক বাজার তৈরি হয়েছে। যে কারণে এটি বর্তমানে লাভজনক একটি পেশা। প্রতি কেজি মধু বর্তমানে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক একটি ক্ষেত থেকে পাওয়া যাচ্ছে ২০(20) থেকে ২৫(25) মণ মধু। যার বাজার মূল্য দেড়(1,50,000) থেকে দুই লাখ(2,00,000) টাকা। সরকারি প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটি বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কৃষকদের অতিরিক্ত অর্থ আয়ে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।


এ ব্যাপারে মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, 'মধু সংগ্রহের এই কাজ শুধু চাষিদের অর্থনৈতিক উন্নয়নই ঘটাচ্ছে না; একই সঙ্গে পরাগায়ণের মাধ্যমে ক্ষেতের ফসল উৎপাদনকে অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে। যে কারণে আমরা কৃষক ও মৌচাষিদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করছি।'



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...