রপ্তানি বাড়াতে এবার এক জেলা এক পণ্য কৌশল

স্বাধীনতার পর প্রথম অর্থ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের ৬৬টি দেশে ২৫টি পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ৩৪৮ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় নিয়ে যাত্রা শুরু করে। গত ৪২ বছরে বাংলাদেশের গড় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাবি্লউটিও) ২০১০ সালের হিসাব মতে, বাংলাদেশ বিশ্বের ৭০তম রপ্তানিকারক ও ৭৭তম ব্যবসায়িক জাতি। তা সত্ত্বেও মাত্র পাঁচটি পণ্য আর পাঁচটি দেশেই আটকে আছে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, নিটওয়্যার, ওভেন, হিমায়িত মৎস্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এই পাঁচটি খাতের ওপরই বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৯০ ভাগ নির্ভরশীল। আর মোট রপ্তানির ৮২ ভাগই আসছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও স্পেন থেকে। রপ্তানি বাণিজ্যের এই চিত্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে ইপিবি। তাই দীর্ঘমেয়াদে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে জোর দিচ্ছে সংস্থাটি। নতুন বাজার সম্প্রসারণে তিন বছর মেয়াদী (২০১২-২০১৫) রপ্তানি নীতি গ্রহণ করেছে ইপিবি।

 

এসব বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা নতুন বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা বাড়াতে কাজ করছি। সে কারণেই একটি বিশদ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পাঁপড় উৎপাদনে উৎপাদকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একইভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে রাবার উৎপাদনেও। ইপিবির উদ্যোগে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে এখন উল্লেখযোগ্য হারে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি হচ্ছে। ফার্নিচার রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় আগামী মাসে একটি আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আর কাগজ ও প্যাকেজিং পণ্য রপ্তানির জন্য বড় পরিকল্পনা নিচ্ছে ইপিবি।

 

আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক বৈঠকে কর্ম পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। নতুন কর্মপরিকল্পনায় রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে জেলাভিত্তিক কিছু পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে তা রপ্তানি খাতে যোগ করার পরিকল্পনা করছে ইপিবি। এ ছাড়া নতুন বাজার সম্প্রসারণে চলতি অর্থবছরে মোট ৩০টি দেশে মেলায় অংশ নেওয়ার কথা ভাবছে সংস্থাটি।

 

সীমিত রপ্তানি পণ্য ও গুটিকয়েক রপ্তানি বাজারের ওপর অতি নির্ভরশীলতা সম্পর্কে ইপিবির মূল্যায়ন এমন সীমিত পণ্য, বাজার এবং উৎপাদন এলাকার ওপর রপ্তানি নির্ভরতা দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, যা যেকোনো সময় দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় ঘটাতে পারে। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের এসব দুর্বলতা সামনে রেখে ইপিবি রপ্তানি উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এরই অংশ হিসেবে রপ্তানি বাণিজ্যের সম্ভাবনা, সমস্যা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিমণ্ডলে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা এবং তা কাজে লাগানোর সক্ষমতার বিষয় বিবেচনা করে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পরিকল্পনার মূল আঙ্গিক হচ্ছে, পণ্য উন্নয়ন এবং বাজার বহুমুখীকরণ।

 

ইপিবির পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে অধিক উৎপাদন ব্যয়ের দেশ থেকে পণ্য প্রতিনিয়ত নিম্ন উৎপাদন ব্যয়ের দেশে ধাবিত হচ্ছে। শ্রমনির্ভর পণ্যগুলোর উৎপাদন ব্যবস্থা এখন উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশে স্থানান্তরিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে চীনসহ বিভিন্ন দেশে এমন ঘটনা ঘটছে। শ্রমনির্ভর উৎপাদনশীল পণ্যে আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে এখন রপ্তানি আয়ের দুর্বল অবস্থানে থাকা ১২টি পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াতে খাতগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে তা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই ১২টি খাতের মধ্যে রয়েছে- জাহাজ, ওষুধ, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স, কাগজ, রাবার, আইসিটি, কৃষি প্রক্রিয়াজাতপণ্য, পাদুকা, লাগেজ, প্রিন্টেড ম্যাটেরিয়ালস ও খেলনা।

 

দেশজ কাঁচামাল নির্ভর পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে ইপিবি। এ জন্য 'এক জেলা এক পণ্য' কর্মসূচি হাতে নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলায় আগরউড ও আগর আতর, দিনাজপুরে পাঁপড় ও বান্দরবানে রাবারের উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ইপিবি। বাকি ১১ পণ্যের ক্ষেত্রে সংস্থাটি পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ নেবে।

 

ইপিবি বলছে, কাট ও পলিশড ডায়মন্ড অত্যন্ত শ্রমঘন শিল্প। এ শিল্পের জন্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা সত্ত্বেও মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান এ পণ্য রপ্তানিতে জড়িত রয়েছে। তাই এ পণ্যের উৎপাদক সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এজন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিচ্ছে সংস্থাটি।

 



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...