লাউ - চাষ

শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে লাউ অন্যতম। এর পাতা সরল ও একান্তর, বোঁটা লম্বা এবং ভেতরে ফাঁপা থাকে। আমাদের দেশে অনেক ধরনের লাউ চোখে পড়ে। ফলের আকার-আকৃতি ও বর্ণের কারণে বিভিন্ন জাত নির্ণয় করা যায়। বর্তমানে সারা বছরই এ সবজিটি পাওয়া যায়। এর ব্যবহার হয় অনেক ধরনের খাবারে। তাই আগাম ফসল পেতে হলে এখনই লাউ চাষ করা দরকার।

জলবায়ু : আমাদের দেশে শীতকালে এ সবজিটি ভালো হয়। পরিবেশের দিক থেকে এটিই হচ্ছে উপযুক্ত সময়। তবে একটি বিষয় লক্ষণীয়, আলো-বাতাস এবং তাপমাত্রা ভালো ফল উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।

মাটি : সব ধরনের মাটিতেই লাউ হয়। দো-আঁশ মাটিতে ফলন সবচেয়ে ভালো হয়। বেলে মাটিতে লাউয়ের ফলন পেতে হলে প্রচুর পরিমাণ জৈব সার আর পানির প্রয়োজন হবে। বর্তমানে বেলে মাটিতে লাউয়ের ভালো ফলন হচ্ছে, তা চরাঞ্চলের দিকে খেয়াল করলে বোঝা যায়।

মাদা তৈরি-বীজ বপন : ভালো মাদা তৈরি করতে দরকার হয় উঁচু জমি। মাদায় প্রয়োজনীয় সার দেয়ার ৭ থেকে ১০ দিন পর প্রতি মাদায় ৩-৪টি করে বীজ বপন করতে হয়। জমিতে আইল তৈরি করে লাউয়ের চারা রোপণ করা যায়। এক্ষেত্রে আইলের প্রতি মাদায় একটি করে চারা রোপণ করতে হবে।

বীজ বপনের গভীরতা : ২.০-২.৫ সেন্টিমিটার। ৪-৫ দিনের মধ্যেই চারার অঙ্কুরোদ্গমন হবে।

মাচা : বীজ বপনের পর মাচা তৈরি করা হলে সহজে বীজের অঙ্কুরোদ্গমন হবে।

স্থান পূরণ : কোনো স্থানে চারা না গজালে বা চারা মরে গেলে সে স্থান পূরণ করতে নতুন করে বীজ বা চারা রোপণ করতে হয়।

গাছ পাতলাকরণ : চারা গজানোর পর প্রতি মাদায় একটি করে সুস্থ-সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।

সারের উপরি প্রয়োগ : সময়মতো সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

মাটি আলগাকরণ : জমির আগাছা পরিষ্কার করার সময় নিড়ানি দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হয়। তার ফলে গাছের গোড়ার মাটি নরম এবং ঝুরঝুরে থাকে। এতে গাছের গোড়ায় আলো-বাতাস সহজে প্রবেশ করে।

বাউনি বা মাচা দেয়া : গাছ যখন ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার বড় হবে তখন গাছের গাড়ার পাশে মাচা বা বাউনি হিসেবে বাঁশের ডগা কুঞ্চি পুঁতে দিতে হবে।

পরাগায়ন : সকাল বা বিকালে স্ত্রী ফুলের গর্ভকেশরের মাথায় পুরুষ ফুলের পরাগরেণু খুব আস্তে আস্তে ২-৩ বার ছুঁয়ে দিলে সহজে পরাগায়ন হয়। একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৫-৬টি স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন করা সম্ভব।

পরিচর্যা : পানি সেচ আর বাউনি দেয়া লাউয়ের প্রধান পরিচর্যা। লাউ ফসলে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়।


আগাম ফসলের জন্য শুষ্ক মৌসুমে জমি অনুযায়ী সেচ দিতে হবে। এর জন্য প্লাবন সেচ প্রয়োজন হয় বেশি। বাউনি বা মাচায় লাউ গাছ বাধাহীনভাবে যাতে বাইতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

 

 

পোকা ও রোগ দমন

মাছি ও জাবপোকা : এ পোকা গাছের কচি ডগা বা পাতার রস শুষে খেয়ে গাছকে দুর্বল করে দেয়। ফলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। মাছি পোকা লাউয়ের ওপর খোসার নিচে দিকে ডিম পারে। ডিম পাড়ার কয়েকদিনের মধ্যেই কীড়া রেব হয়ে আসে এবং লাউয়ের কচি অংশ খেয়ে ফেলে।

পাউডারি বা ডাউনি মিলউড : এ রোগে আক্রমণ করলে গাছের পাতায় পাউডারের মতো আবরণ দেখতে পাওয়া যায়। মাটিতে রস থাকলে এ রোগ হয়। ডাউনি মিলউড রোগে গাছের পাতা বাদামি রঙ ধারণ করে। ছত্রাক আক্রমণে পাতা কুঁচকে যায়।

প্রতিকার : এ রোগের প্রতিকারের জন্য আপনার কাছের কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিন।



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...