সবজি - উৎপাদনে শীত ও গ্রীষ্মের পার্থক্য নেই

বছরের বারোমাসেই মানুষ এখন প্রায় সব ধরণের সবজির স্বাদ গ্রহনের সুযোগ পাচ্ছে। খাদ্য তালিকায় সবজি অত্যাবশকীয়। সেজন্য প্রয়োজনের তাগিদে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষীরা সবজি আবাদ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে পাল্টে দিচ্ছে শীতকাল আর গ্রীষ্মকালের মধ্যে পার্থক্য। মুলা, লাউ, বেগুন আর শিমসহ অনেক শীত কালীন সবজি এখন সব সময়েই আবাদ ও উৎপাদন করা হচ্ছে।শুধু মাত্র ফুলকপি ছাড়াও এমন কোন শাক সবজি নেই যা শীতকাল আর গ্রীষ্মকালে সমানতালে আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে না সবজি উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টিকারী যশোর অঞ্চলে।

 

সারাদেশের মধ্যে সবজি উৎপাদনে এ অঞ্চল শীর্ষে রয়েছে। শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখার জন্য চাষীরা ও প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে। নতুন নতুন ফর্মুলায়  মুলা, লাউ, বেগুন, শিম, টমেটো, ঢেড়স, কাকরোল, বরবটি, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গে, করলা, পুইশাক, ডাটা,শাক, পটল, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, উচ্ছে, লালশাক ও সবুজ শাকসহ প্রায় সব ধরনের সবজি যশোরের মাঠের পর মাঠ আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। অবশ্য যশোরে সবজি বিপ্লব ও চাষীদের বিরাট সাফল্যের পিছনে সরকারের কোন কৃতিত্ব নেই, বরং ব্যর্থতা আছে।

 

সেটি হচ্ছে চাষীরা প্ররিশ্রম করে সবজি উৎপাদন করে কিন্ত বাজার ব্যবস্থা না থাকায় উপযুক্ত মূল্য পায় না। তারা বরাবরই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নানাভাবে। বাজারজাতকরন এবং সংরক্ষন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারনে সবজি চাষীরা পিছিয়ে থাকছে। যশোরের বিভিন্ন এলাকার সবজির মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে অন্যান্য ফসলের চেয়ে বারোমাসেই এখন রকমারি সবজি আবাদ হচ্ছে। বর্তমানে শীতকাল ছাড়া যেসব সবজি আবাদ হয় না।এখন তা পুরোপুরি পাল্টে যাচ্ছে।

 

গ্রীষ্মকালেও হচ্ছে শীতকালীন সবজি। তবে শীতকালের মতো গ্রীষ্মকালের সবজি ফলন তুলনামূলকভাবে একটু কম হয় বলে চাষী ও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কিন্ত মানুষ সব সময়ে সব কিছুর স্বাদ গ্রহন করতে পারে না। যা কয়েক বছর আগে ও ছিল না। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানিয়েছেন। দেশে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন দুটি মৌসুমে সরকারীভাবে সবজি আবাদ লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয় ৬ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে।

 

যার একটা বড় অংশ হচ্ছে যশোরসহ দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে। অনেকের কাছে আশচর্য মনে হবে শীতকালীন মুলা পাওয়া যাচ্ছে গ্রীষ্মকালে, যা কিছুদিন আগে ছিল কল্পনাতীত। গ্রীষ্মকালীন পেয়াঁজঃপেয়াঁজের ঝাঝ বেড়ে যায় মাঝেমধ্যে। কারন কী তার অনুসন্ধান নেই। সারাদেশের পেয়াঁজের বার্ষিক চাহিদা পূরনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিন্ত কাজে লাগানো হচ্ছে না। পেঁয়াজ সাধারণত শীতকালীন সবজির সাথে আবাদ ও উৎপাদন করা হয়েছে।

 

তবে তা একেবারেই পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। সারাদেশে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বিশেষ করে রোপা আমর ধানের আগে ও আখের সাথে সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ আবাদ করা যায়। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদ্যোগ আছে তবে বাস্তব ব্যবস্থাপনার বড়ই অভাব রয়েছে। সেজন্য দেশ ব্যাপী গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ ও উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য আসছেনা।

 

 প্রতিবছরই বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের বক্তব্য এটি রীতিমতো সরকারের অহেতুক অর্থ গচ্চা দেয়ার কারণ দেশে যেখানে সুযোগ রয়েছে তাকে কাজে না লাগিয়ে আমদানি করা হচ্ছে কেন-এ প্রশ্ন সংগত কারনেই এসে যায়। দেশে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ ও উৎপাদনের দিকে জোর দিয়ে বার্ষিক চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ করা খুব সহজেই খুব সম্ভব বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

 

দেশের কোন কোন এলাকায় ইত্যেমধ্যে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন করে সাফল্য অর্জন হয়েছে। বিশেষ করে যশোর অঞ্চলের ব্যক্তিগত উদ্যেগে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যশোরের একজন আদর্শ কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে যানা যায়, বর্তমানে সারাদেশে দেড় লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ ও ৮ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে এবার ও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।

 

উদ্যোগ নেয়ার অভাবে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দেয়, দাম বেড়ে যায়। মাঝে মধ্যে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায় পেঁয়াজ। সূত্র মতে, দেশে বার্ষিক চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। যে লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয় তা যদি আবাদ ও উৎপাদন হয়, তাহলে পূরন করা সম্ভব। তাছাড়া গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ও সাথী ফলন হিসেবে পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন ব্যাপক আকারে শুরু হলে পেঁয়াজের কোন ঘাটতি থাকবে না বলে কৃষি বিশেষজ্ঞগণ অভিমত ব্যাক্ত করেছেন। সে জন্য এখন দেশের সব জেলা এলাকায় শীতকালীন পেঁয়াজের মতো গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ও উৎপাদনের প্রস্ততি নেয়া হচ্ছে। (২৫ নভেম্বর২০০৫)



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...