হাঁস - আমাকে হাসতে শিখিয়েছে
মেহেরপুর সদর উপজেলার সিংহাটি গ্রামের শহিদুল ইসলাম মাঠে হাঁস চরাচ্ছেন।

মেহেরপুর জেলার প্রত্যন্ত জনপদের এক কৃষক হাঁস চাষ করে প্রতিদিন তিন হাজার টাকা আয় করছেন। জেলার বিভিন্ন খাল-বিল, হাওড় এলাকার মানুষ প্রশিক্ষণ নিয়ে হাঁস চাষ প্রকল্প হাতে নিলে এই জেলার মানুষ হাঁস চাষ থেকে বছরে কয়েকশ কোটি টাকা আয় করতে পারবেন বলে মনে করছে পরিবেশ ও মৎস্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা। মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের সিংহাটি গ্রামের বিলপাড়ের শহিদুল ইসলাম মেহেরপুর জেলার হাঁস চাষের মডেল। শহিদুল হাঁস চাষ প্রকল্প হাতে নিয়ে প্রতি মাসে এখন বিনা খরচে এক লাখ টাকার বেশি উপার্জন করছেন।

হাঁসের রাজা রাজ হাঁস। কিন্তু ব্রাউন রঙের ক্যাম্বেল হাঁস চাষ মেহেরপুরের যুবকদের বেকারত্ব দূর করছে। সদর উপজেলার সিংহাটি গ্রামের শহিদুল ইসলাম বছর চারেক আগে মাত্র ৩০০ (300) হাঁস নিয়ে গ্রামের বিলপাড়ে হাঁস চাষ প্রকল্প হাতে নেন। এই হাঁস থেকে বর্তমানে তাঁর এক হাজার ৪০০ (1400) হাঁস।

হাঁসচাষি শহিদুল ইসলাম জানান, হাঁস চাষে তাঁর কোনো খরচ নেই শুধু দুজন শ্রমিক ছাড়া। বিলের পানির তলদেশ হাঁসের খাবারের আঁধার। শহিদুল ইসলাম সকাল ৮ টায় হাঁস ছেড়ে দেন। বিলের পানির নিচে ডুবে ডুবে হাঁস ঝিনুক-শামুক-জাতীয় খাবার খেয়ে সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরে। শহিদুলের বর্তমানে হাঁসের সংখ্যা এক হাজার ৪০০।  
প্রতিদিন  ৮০০-৯০০(800-900) ডিম পেয়ে থাকেন। পাইকারি ৫০০(500) টাকা শ এবং খুচরা প্রতিটি সাত(7) টাকা করে ডিম বিক্রি হয়। বর্তমানে শহিদুল প্রতিদিন তিন (3)থেকে সাড়ে তিন(3.5) হাজার টাকা করে পেয়ে থাকেন ডিম থেকে। খরচ বলতে হাসেম ও রবিউল এই দুজন শ্রমিককে প্রতিদিন ১২০ (120)টাকা করে মাত্র ২৪০(240) টাকা দিতে হয়। নাটোর ও নওগাঁ থেকে হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করে হাঁস চাষ শুরু করেন শহিদুল। তাঁর এই হাঁস চাষ দেখে এলাকার বেকার যুবকরাই নয়, হাঁস চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এলাকার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষও। অনেক বাড়ির মেয়েরাও পারিবারিক খাদ্যের চাহিদা মেটাতে হাঁস চাষ করছেন। বলা যায় সিংহাটি গ্রামটি এখন হাঁস চাষের গ্রামে পরিণত হয়েছে।


এলাকা তথা জেলার বেকার যুবকদের প্রতি হাঁসচাষি শহিদুলের আবেদন বেকারত্ব দূরীকরণে বিলপাড়ে হাঁস চাষ প্রকল্প হাতে নিতে হবে। তার আগে নিতে হবে হাঁস চাষের প্রশিক্ষণ। তাহলে হাঁস থেকে সোনার ডিম ঘরে আসতেই হবে। ইতিমধ্যে হাঁস চাষে অনেক বেকার ও শিক্ষিত যুবক এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা তাঁদের বেকরত্ব দূর করতে শুরু করেছেন। হাঁসচাষি শহিদুল বলেন, এই হাঁসই মূলত আমাকে হাসতে শিখিয়েছে।


হাঁসচাষি শহিদুল অভিযোগ করেন, হাঁসের রোগ-বালাই হলে জেলা পশু পালন অফিস থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। দীর্ঘ কয়েক বছরের মধ্যে এক দিনের জন্যও পশু পালন অফিসের কেউ তাঁর ফার্ম পরিদর্শনে আসেননি। ফলে অন্য জেলার হাঁস পালনকারীদের পরামর্শে হাঁস পালন করে থাকি। গ্রামের বেকার যুবক রাশেদ জানান, শহিদুলকে দেখে তিনি হাঁস চাষে নেমেছেন। বেকারত্ব দূরীকরণের পাশাপাশি এখন আর্থিকভাবে সচ্ছলতা লাভ করেছেন। হাঁস শ্রমিক হাশেম জানান, প্রতিদিন এই হাঁসের পরিচর্যা করে ১২০ টাকা পেয়ে থাকি। পাশাপাশি বাড়িতে অল্প করে নিজেও হাঁস চাষ করছি।


মেহেরপুর জেলা পশুসম্পদ বিভাগের সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কিশোর কুমার কুন্ডু জানান, প্রশিক্ষণ নিয়ে হাঁস চাষ করলে প্রত্যেক হাঁস চাষি লাভ থেকে বছরে দুই-তিন বিঘা করে জমি কিনতে পারবেন এবং ডিম অধিক উৎপাদন হলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদেশে রপ্তানি সম্ভব হবে। বর্তমানে জেলায় যে পরিমাণ ডিম উৎপাদন হচ্ছে, তা দিয়ে জেলার চাহিদা মেটানোর পর আশপাশের জেলায়ও ডিম বাজারজাত করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় ৬১টি হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামার ও পারিবারিকভাবে পালিত রাজহাঁস, স্থানীয় জাতের পাতিহাঁস ও বিদেশি জাতের খয়েরি রঙের ক্যাম্বেল জাতের মিলে মোট এক লাখ চার হাজার হাঁস আছে।

 



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...