দেশীয় জাত - হাইব্রিডকে হার মানিয়েছে

হাইব্রিডকে হার মানিয়েছে দেশীয় জাতের পেঁপে। জাতটির নাম যশোরী। দেশীয় জাতকে উন্নত করে যশোরের এক আদর্শ কৃষক "যশোরী পেঁপে'' বীজ উদ্ভাবন করেছেন। তার নাম মোঃ ইউসুফ আলী। হাইব্রিডের চেয়েও ফলন ও স্বাদ বেশী এবং তা পরীক্ষিত। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর উদ্ভাবিত উন্নত জাতকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

 

সাধারনত যে কেউ বললেন যে হাইব্রিড পেঁপে। কিন্তু না, একেবারে দেশীয় জাত। যার স্বাদ ও গন্ধ আলাদা। ঐ পেঁপে সবজি ও ফল হিসেবে খাওয়া যায়। তবে গাছ পাকা  পেঁপে একবার খেলে আরেকবার খাওয়ার ইচ্ছে জাগবে দেশীয় উদ্ভাবিত জাতে হাইব্রিডের চেয়েও বেশী ফলন হওয়ায় ঐ বীজ এখন রীতি মতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে যশোর অঞ্চলে।

 

কৃষক ইউসুফ আলী জানালেন, বিভিন্ন জাতের বীজ থেকে পেঁপে আবাদ করে আশানুরূপ ফলন না পেয়ে তিনি পেঁপে বীজ উদ্ভাবনের কাজে হাত দেন। যশোরের কৃষি অফিসার সৈয়দ আব্দুল মাজেদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে তিনি দীর্ঘ প্রায় এক বছর পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর দেশীয় উন্নত জাতের পেঁপে বীজ উৎপাদনে সফল হন।

 

তার থেকে পেঁপে বীজ নিয়ে যশোরের বিভিন্ন এলাকায় হাইব্রিড জাত বাদ দিয়ে পেঁপে আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। তিনি আরো জানান, শুধু পেঁপে নয়, অন্যান্য ফল আবাদের ক্ষেত্রেও দেশীয় স্বাদ ও গন্দ্ব ঠিক রাখার স্বার্থে আমাদের হারিয়ে যাওয়া জাতকে ক্রসসহ বিভিন্ন পন্থায় উন্নত জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব।

 

যশোর শহর থেকে মাএ ৫ কিলোমিটার দূরে শহরতলী ঘুরুলিয়া গ্রাম। সেখানে উচ্চ শিক্ষিত কৃষক ইউসুফ প্রথমে ঐ গ্রামের বিল এলাকায় জমি ক্রয় করেন। পুকুর কেটে শুরু করে মাছ চাষ। এরপর পুকুরের মাছ চাষের পাশাপাশি পুকুর পাড়ে সবজির আবাদে হাত দেন। সবজির সাথে পেঁপের আবাদ করতে গিয়ে তিনি দেখেন উৎপাদন ভালো হচ্ছে না।

 

মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দেন হাইব্রিড জাতের পেঁপে আবাদের। তিনি তাতে রাজি না হয়ে দেশীয় জাত থেকে উন্নতমানের বীজ উৎপাদনের কাজে হাত দেন। সফল হন বছরখানেকের মধ্যে। নিজস্ব উদ্ভাবিত বীজের নাম দেন তিনি "যশোরী পেঁপে" বীজ। ওই বীজের পেঁপের ফলন এতটা বেশী হয় যে হাইব্রিড জাতকে হারিয়ে দেয়। তার অনুকরন ও অনুসরন করতে আশেপাশের অনেক পেঁপে চাষী ছুটতে থাকে ইউসুফের সবজি বাগানে। সরেনজমিনে ঘুরুলিয়া গ্রামের আদর্শ কৃষক ইউসুফ আলীর সবজি বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, আসলে সেখানে সবজির জন্য কোন আলাদা জমি নেই।

 

মোট ৯ টি পুকুর রয়েছে ৭০ বিঘা জমির উপর। পুকুর গুলো বড় বড়। পুকুর পাড়ে অন্যান্য সবজির আবাদের পাশাপাশি পেঁপে আবাদ করেছেন। পেঁপে গাছের ডালপালা মাড়িয়ে পুকুরের পাড় ধরে হাঁটলে যে কারো হৃদয় মন দুলে উঠবে আনন্দে। ছোট ছোট পেঁপে গাছ বড় বড় পেঁপে ঝুলে আছে। পেঁপের ভারে গাছ নুইয়ে পড়ছে।

 

পেঁপে বাগানে দাঁড়িয়ে কৃষক ইউসুফ আলী সাথে কথা হলো। তিনি জানালেন মাত্র ৩ মাসের মধ্যে পেঁপে উৎপাদন হয়। মাএ ৩ বিঘা জমিতে তিনি গত কয়েক বছর ধরে প্রতিবছরে ২ লক্ষাধিক টাকা আয় করেন। এতটা লাভবানের কথা ইতো পূর্বে তিনি কল্পনাও করতে পারেনি। পেঁপের আবাদ ও উৎপাদন ভালো হওয়ায় আগামীতে আরো বেশী জমিতে তিনি পেঁপে আবাদের কথা চিন্তাভাবনা করেছেন তিনি। তার কথা হাইব্রিডে ফলন ভালো একথা অস্বীকার করা যাবে না। তবে দেশীয় জাতের স্বাদ পাওয়া যায় না। 



HTML Counter © ২০১৩ আলোকিত গ্রামবাংলা
Powered by Ipsita Soft
Loading... Please wait...